হলদিয়া: পরিবেশ এবং শিল্প, এই দুই ক্ষেত্রের মানুষদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে কী ভাবে পরস্পরের মধ্যে আরও সমন্বয় গড়ে তোলা যায়, লাভবান হয় দু’ পক্ষই, সে ব্যাপারে হলদিয়ায় এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই আলোচনাসভার উদ্যোক্তা ছিল দ্য বেঙ্গল চেম্বার।
শিল্পাঞ্চলে বাস্তুতন্ত্র রক্ষার ব্যাপারে সদাই সক্রিয় দ্য বেঙ্গল চেম্বার। পরিবেশ রক্ষা, দূষণ কমানোর ব্যাপারে তারা সব সময় উদ্যোগী হয়। সেই উদ্যোগের অন্যতম অঙ্গ হল শিল্পাঞ্চলে বাস্তুতন্ত্র রক্ষার ব্যাপারে নিয়মিত আলোচনাসভার কর্মসূচি। এ বার ছিল এই কর্মসূচির ষষ্ঠ বছর। হলদিয়ার গোল্ডেন রিট্রিট হোটেলে আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরা।
সভায় শিল্প এবং পরিবেশের বর্তমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশিষ্টদের থেকে এক গুচ্ছ নতুন মতামত, পরামর্শ পাওয়া যায়। সেগুলি পাঠানো হবে সরকারের কাছে, যাতে সরকার এ ব্যাপারে আরও বেশি উদ্যোগী হয়।
রাজ্য সরকার হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের এলাকা আরও বাড়াচ্ছে। এই প্রকল্পে আরও ৮০৫ বর্গকিমি এলাকা অন্তর্ভুক্ত হবে। এর মধ্যে রয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়া। তৈরি করা হবে জমি ব্যবহারের মৌজাভিত্তিক ডিজিটালাইজড মানচিত্র এবং ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যান। শিল্পাঞ্চলে শিল্প, কৃষি, আবাসন, রাস্তাঘাট, রেল, বনাঞ্চলের জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। এর পাশাপাশি কৃত্রিম জলাশয়, নদী, হ্রদ, খাল, পুকুরও থাকবে। বাগানগুলিকে সুন্দর করে সাজানো হবে।
আরও পড়ুন: জল দূষণ কমাতে বিশেষ ব্যাটারি চালিত জলযানের কথা ভাবা হচ্ছে
ওই আলোচনাসভায় দ্য বেঙ্গল চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর চক্রবর্তী রাজ্যের প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রসঙ্গে বলেন, শিল্পাঞ্চলকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলতে এগুলি নিঃসন্দেহে ভালো দিক। এর ফলে রাজ্যের শিল্পায়ন পক্ষেও ভালো বার্তা যাবে।
সুবীরবাবু মনে করিয়ে দেন, বণিকসভার কাজ হল সরকার এবং বণিকদের এক সঙ্গে নিয়ে কাজ করা, যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকা আরও উন্নত হয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন, উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ নিয়েও শিল্পসংস্থার চিন্তা করা দরকার। এর মধ্যে রয়েছে গুণমান নির্ণয়, শক্তি বাঁচানো, কার্বন নিঃসরণ কমানো, জল শোধন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বণিকসভা সব সময় এলাকায় উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। এবং এলাকায় যাতে বাণিজ্য আরও উন্নত হয়, সেই চেষ্টা করছে।
সুবীরবাবু জানান, হলদিয়ার উন্নয়নের জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনকে বণিকসভা চিঠিও দিয়েছিল। সেই চিঠিতে হলদিয়ায় লগ্নির ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্রিজ বেহারি। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খুব শীঘ্রই আমরা ‘বিএস ফোর’ জ্বালানি থেকে ‘বিএস সিক্স’ জ্বালানি ব্যবহার শুরু করতে চলেছি। ২০২০ সাল থেকে দেশের মানুষের সঙ্গে এই জ্বালানির পরিচয় করিয়ে দেব। আমরা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে আছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমরা এই জ্বালানি দেশের মানুষের কাছে আনতে পারব।”
ওই আলোচনাসভায় আরও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হীরকজ্যোতি মজুমদার, দ্য বেঙ্গল চেম্বারের শক্তি এবং পরিবেশ বিষয়ক কমিটির মেন্টর এবং প্রেরণা ইনজিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেডের অধিকর্তা (প্রযুক্তি) অরুণকুমার মুখার্জি, হলদিয়া এনার্জির লিমিটেডের পরিবেশ বিষয়ক দফতরের ম্যানেজার ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল-এর ম্যানেজার (প্রযুক্তি) শুভাশিস পাল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দুর্গাপুর এবং শিলিগুড়িতেও এ ধরনের একই কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে এই বণিক সংগঠন।