খবর অনলাইন : বিশ্ব উষ্ণায়নের রাশ টেনে ধরতে আমাদের এই পৃথিবী গ্রহই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এই দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, পৃথিবীর মাটি অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস মজুত করে রাখার ক্ষমতা ধরে যা আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবকে সীমিত করে রাখতে পারে। বিশ্ব জুড়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এবং জমি ব্যবহারের স্বপ্রতিপালক অনুশীলন অনুসরণ করলে কৃষিজমি ও প্রাকৃতিক বন্য জমিতে আরও বেশি গ্যাস মজুত করে রাখা যায় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
এবারডিন এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বছরে যে গ্যাস নির্গমন হয় তার পাঁচ ভাগের চার ভাগ মাটি ধারণ করতে পারে যদি মাটির অনেক গভীরে শিকড় চালিয়ে দিতে পারে এমন শস্য চাষ করা হয়, কাঠকয়লায় সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করা হয় এবং স্বপ্রতিপালক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে মাটির যে লড়াই করার ক্ষমতা আছে, তা এত দিন উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর উপকরণের অভাবে।
প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে গবেষকরা এখন তাঁদের পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করতে পারছেন। তাঁরা মনে করেন, বিজ্ঞানী, নীতি-নির্ধারক এবং জমি ব্যবহারকারীরা এক যোগে সুসংহত উদ্যোগ নিলে মাটির গ্রিনহাউস গ্যাস ধারণক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ করা সম্ভব। তাঁদের প্রস্তাব, মাটির গ্রিনহাউস গ্যাস ধারণক্ষমতা বাড়াতে চাই বিশ্ব জুড়ে সমাজভিত্তিক উদ্যোগ এবং এ ধরনের উদ্যোগই এ ব্যাপারে ঐতিহ্যগত বাধা কাটাতে এবং অর্থ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মাটি এখন ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস ধারণ করে যা মাটির গভীরে স্থায়ী জৈব পদার্থ হিসাবে মজুত থাকে।
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জিও-সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক ডেভ রিয়ে বলেছেন, একুশ শতকে আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো বিপজ্জনক ঘটনাকে এড়াতে হলে আমাদের লড়তে হবে। আর সেই লড়াইয়ে আমাদের চাই শক্তিশালী বন্ধু। এ রকম একজন খুব শক্তিশালী বন্ধু তো আমাদের পায়ের নীচেই রয়েছে। মাটি এখনই কার্বনের বিশাল মজুত ভাণ্ডার। উন্নততর পরিচালন ব্যবস্থা এই মাটিকে আরও অনেক বড়ো ভাণ্ডার করে তুলতে পারে। বিশ্ব জুড়েই মাটি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের বোঝাপড়াতেও অনেক দ্রুত উন্নতি হয়েছে। সময় হয়েছে এখন এই মাটিকে অনেক বড়ো ভাবে কাজে লাগানোর। বিজ্ঞানীদের পাওয়া ‘ডেটা’ ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিট স্মিথ বলেন, আপনারা গাছ জন্মানো, গাছের বাড়বাড়ন্ত খালি চোখে দেখতে পান। কিন্তু মাটি যে কত কার্বন মজুত রাখে তা দেখতে পান না। তাই মাটির অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিষয়টি আমাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২০১৫-তে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ পালন এবং গত ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আবহাওয়া সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত চুক্তি অনুযায়ী ফরাসি সরকার মৃত্তিকা-কার্বনের মজুত বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার পর আবহাওয়া পরিবর্তনের পরিণতি রুখতে মাটির ভূমিকা এখন খুব জোরদার ভাবে আলোচ্য বিষয়।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।