খবর অনলাইন : এক দিকে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ক্লাস বয়কটের ডাক, অন্য দিকে ক্লাসে ফিরে আসার জন্য বিতর্কিত উপাচার্যের আর্জি, এরই মধ্যে সোমবার থেকে ক্লাস শুরু হল হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ধৃত ২৫ ছাত্র ও ২ জন শিক্ষক। ইতিমধ্যে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত এক নিরপেক্ষ তদন্তকারী দল উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছে। তাদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২২ মার্চ ছাত্রদের আন্দোলন তুলতে এসে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। এমনকী আন্দোলনরত সংখ্যালঘু ছাত্রদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমাও জুটেছে আইনরক্ষকদের কাছ থেকে। তবে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি উপাচার্যকে সরানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন। ২২ মার্চ পুলিশি বাড়াবাড়ির অভিযোগ নিয়েও তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্যাম্পাসে সব কিছুই ঠিকঠাক চলেছে। ক্লাস স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি (জ্যাক) অবশ্য দাবি করেছে, বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই ক্লাস বয়কট করেছেন। ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট জুহেল কেপি বলেছেন, “প্রায় ৭৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ক্লাসে যাননি।” জ্যাক-এর তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, ধৃতরা মুক্তি পাওয়ায় মঙ্গলবার ক্লাস স্বাভাবিক ভাবে হবে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখিয়ে সোমবার ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস ইউনিভার্সিটি, মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু ইউনিভার্সিটি, ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি এবং পালামারু ইউনিভার্সিটি ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করেন।
জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আরও দাবি, ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিদের উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে এবং উপাচার্য পি আপ্পা রাওকে অবিলম্বে অপসারণ করে তফশিলি জাতি/তফশিলি উপজাতি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইনে গ্রেফতার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমস্ত বাহিনী সরাতে হবে, অযথা ও লক্ষ্য-নির্দিষ্ট হিংসা, মিথ্যে মামলায় আটক, আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া, ছাত্রী ও ফ্যাকাল্টিদের উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোহিত ভেমুলা ও অন্য কয়েক জন ছাত্রকে সাসপেন্ড করার ক্ষেত্রে তিনি অবিবেচনার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং তারই ফলে রোহিত আত্মঘাতী হন। উপাচার্য তফশিলি জাতি/তফশিলি উপজাতি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইন মোতাবেক জামিনঅযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত। উপাচার্য ২৪ জানুয়ারি থেকে ছুটিতে যান। ২১ মার্চ হঠাৎই ভিসি’র অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছেন। তাঁর প্রত্যাবর্তনের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় মহল ও পুলিশ মহলে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাঁর ছুটিতে যাওয়ার পর অস্থায়ী উপাচার্য এম পেরিয়াসামি পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে এনেছিলেন। তাই অনেকেই চাননি, এই সময়ে উপাচার্য ফিরুন। সিনিয়র পুলিশ অফিসারেরাও তাঁকে সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বদ্ধপরিকর, ফিরবেনই। “তিনি যেন একটা লড়াই করার জন্য ছটফট করছিলেন। এবং সে ভাবেই তৈরি হয়ে এসেছিলেন” – মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের।
২২ মার্চ উপাচার্যের লজের সামনে ব্যাপক উত্তেজনা। বিশাল সংখ্যক ছাত্র সেখানে জমায়েত। উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে হঠাৎ শুরু হল পাথর ছোড়া। ইতিমধ্যে কয়েক জন উপাচার্যের বাংলোতে ঢুকে ড্রইংরুম তছনছ করল। শুরু হল পুলিশের লাঠিচার্জ। ছাত্রদের বেধড়ক পেটানো হল। বিকেল পর্যন্ত পুলিশের তাণ্ডব চলল। চলল ব্যাপক ধরপাকড়। এমন অনেক ছাত্রকে ধরা হল যারা ভিসির বাড়ির সামনে ছিলই না। ধরা পড়লেন দুই শিক্ষক কোন্ডা যেসু রত্নম ও তথাগত সেনগুপ্ত, যাঁরা ছাত্রদের শান্ত করতে গিয়েছিলেন। এর পরই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসের ১৪টি মেসই বন্ধ, খাবার নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট সংযোগ নেই। স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত এটিএম কার্ডও ব্লক করে দেওয়া হল। অভুক্ত ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রান্না করার ব্যবস্থা করায় তাদের বেদম পেটানো হল। পাবলিক প্লেস-এ রান্না করার অপরাধে! দেশের অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা।
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ কমিশনের কাছে যে আবেদন জমা পড়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন উপাচার্যের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে।
প্রায় এক সপ্তাহ পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলল। আপাতদৃষ্টিতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও পরিবেশ কিন্তু বেশ থমথমে।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।