খবর অনলাইন: তা হলে এ বার সিপিএমও কি নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পথে হাঁটা শুরু করল ? বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজধানী দিল্লির মানুষ হতবাক। প্রায় সব খবরের প্রথম পাতা জুড়ে লাল রঙের বিজ্ঞাপন। তাতে লেখা ‘কমিটেড টু টার্ন কেরালা ইনটু আ ট্রুলি গড’স ওন কান্ট্রি’। বিজ্ঞাপনে এক জনের হাসিমুখের ছবি, তিনি কেরলের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য পিনারাই বিজয়ন। পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে আতিপাতি করে কোথাও খুঁজেও পাওয়া গেল না সেই রাজনীতিকের দলের নাম বা প্রতীক।
বিজ্ঞাপনে শুধুই লেখা— পিনারাই বিজয়নের সরকার। যে সিপিএম ব্যক্তির আগে দলকে রাখায় বিশ্বাসী, সেই দলের নেতার ছবি-সহ এমন বিজ্ঞাপন দেখে তাই অনেকেই অবাক। সিপিএম দলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি এ বার তাদের দলেও ব্যক্তিপুজো শুরু হয়ে গেল ? যে দলে দু’-এক জন প্রবাদপ্রতিম নেতা ছাড়া কারও জন্মদিন পর্যন্ত পালন করা হয় না, সেই দলে এমন ঘটনা ঘটল কী করে ? কেন এই ব্যতিক্রম ? পিনারাই বিজয়ন কি এমন কেউকেটা যাঁর বেলায় দল এই কাণ্ড মুখ বুঁজে মেনে নেবে ?
দল ও দলের বাইরে সহযোগী বামপন্থী দলগুলিতে এ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বস্তুতপক্ষে বিজয়নের এমন কাণ্ড-কারখানার হদিশ যে সিপিমের শীর্ষ কর্তারাও রাখেননি, তা দলের সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্যেই প্রমাণিত। ইয়েচুরি বলেছেন, “আমি বিজ্ঞাপনটা দেখিনি। কলকাতায় ছিলাম, সেখান থেকেই কেরলে এসেছি। আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে কী করে এটা ঘটল।”
কেরলের এক প্রবীণ সিপিএম নেতা বলেছেন, “বিজয়নকে মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত অচ্যুতানন্দন সহৃদয়ে মেনে নিয়েছেন। অন্য দিকে বিজয়নকে তুলে ধরার জন্য এই সব যে কাণ্ড-কারখানা শুরু হয়েছে, তা সরকার এবং পার্টির পক্ষ থেকে জনগণের কাছে ভালো বার্তা নয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই একটা অযথা বিতর্ক তৈরি করা হল।”
কেরলে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের মেজ শরিক সিপিআই এ ধরনের ব্যক্তিপূজা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কমিউনিস্ট পার্টিরা এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি বলেছেন, “তবুও বিজ্ঞাপনে বিজয়নের সরকার না বলে এলডিএফ সরকার বলা হলে মন্দের ভালো হত। সাধারণত এ ধরনের ব্যক্তিপূজা কমিউনিস্ট পার্টি বা বামপন্থী দলগুলিতে চলে না। ব্যক্তিপূজাকে কখনও উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া, এ সব বিজ্ঞাপন দিয়ে এত টাকা খরচ করার কোনও মানে হয় না।”
এই প্রশ্নটাও বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে বামপন্থী মহলে। যে সিপিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত সরকারি অর্থ অপচয় করে আত্মপ্রচারের অভিযোগ তোলে, সেই দলে এই কাণ্ড। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, বামপন্থী সিপিএম কেন এই ভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করবে ? অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, সিপিএম কেরলকে সত্যিই ঈশ্বরের আপন দেশ-এ পরিণত করার কথা বলছে। তা হলে কি তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেও শুরু করল নাকি ?
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।