সান ফ্রান্সিসকো: টুইটার (Twitter), মেটা (Meta)-র পর এ বার আমাজন (Amazon)। গণছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি। আমাজন হার্ডওয়্যার প্রধান ডেভ লিম্প (Dave Limp) বুধবার কর্মীদের উদ্দেশে একটি বিবৃতিতে লেখেন, “ধারাবাহিক পর্যালোচনার পরে, আমরা সম্প্রতি কিছু টিম এবং প্রোগ্রামে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছু টিম একত্রিত হচ্ছে। এর পর আর কিছু কর্মীর প্রয়োজন হবে না”।
কোন বিভাগে কোপ?
বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে প্রকাশ, গত কয়েক মাস ধরে বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সংস্থা। তারই ফল হিসেবে গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাজন কর্তৃপক্ষ। ডেভ লিম্প আরও লেখেন, “এই খবরটি (কর্মী ছাঁটাইয়ের) দিতে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ আমরা জানি এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ডিভাইস ও পরিষেবা সংস্থা থেকে প্রতিভাবান কর্মীদের হারাতে চলেছি।” প্রযুক্তিগত বিভাগের পাশাপাশি রিটেল এবং মানবসম্পদ বিভাগও প্রভাবিত হতে চলেছে এই সিদ্ধান্তে।
এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত কর্মীদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে আমাজন। তাঁরা যাতে নতুন কাজ খুঁজে পেতে পারেন, সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। সিএনবিসি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মীদের ইতিমধ্যেই ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানাতে শুরু করেছেন ম্যানেজাররা। তাঁরা যাতে, সংস্থার ভিতরেও অন্য় কাজ খুঁজে নিতে পারেন, সে ব্যাপারেও ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে। এর জন্য তাঁদের দু’মাস সময় রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
ছাঁটাই হতে পারেন ১০ হাজার কর্মী
চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্পোরেট এবং প্রযুক্তি বিভাগে প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করছে আমাজন। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ চাকরি করেন সংস্থায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি সত্যিই ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়, সংস্থার ইতিহাসে এটাই হবে সবচেয়ে বড়ো কর্মী ছাঁটাই।
পাশাপাশি, সংস্থার মুখপাত্র কেলি নান্টেল বলেছেন, বার্ষিক অপারেটিং পরিকল্পনা পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, নির্দিষ্ট ভূমিকার আর প্রয়োজন নেই। তা থেকেই অনুমান, এই গণছাঁটাই প্রক্রিয়ায় শুরুতেই কোপ পড়তে পারে ‘অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এর মতো ডিভাইস- ভিত্তিক বিভাগগুলিতে।
এর আগে টুইটার এবং মেটা বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার কর্মচারীকে বরখাস্ত করার আগেভাগেই ছাঁটাইয়ের কারণ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। কতকটা একই ভাবে আমাজনের তরফেও কর্মীদের উদ্দেশে পৌঁছাল বার্তা। নান্টেল জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবসা চালিয়ে যেতে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার অথবা কী কী পরিবর্তন উচিত, সেটা আমরা বুঝি। বর্তমান সামষ্টিক-অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই পরস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছি। কিছু টিমের সমন্বয় করা হচ্ছে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভূমিকার আর প্রয়োজন নেই। আমরা এই সিদ্ধান্তগুলিকে মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছি না, এবং আমরা প্রভাবিত হতে পারে এমন সব কর্মচারীকে সহযোগিতার জন্যও কাজ করছি”।
মেটা এবং টুইটারে কর্মী ছাঁটাই
গত সপ্তাহে ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটাও বিশাল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। প্রায় ১১ হাজার জনকে ছাঁটাই করেছে তারা, যা সংস্থার মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ। সংস্থার ইতিহাসে এই প্রথম বার এই বিশাল সংখ্যক কর্মীকে বরখাস্ত করা হল। রাজস্ব হ্রাস এবং প্রতিকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে, মার্ক জুকারবার্গ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ দিকে, টুইটার প্রধান ইলন মাস্কও সংস্থা থেকে ৩ হাজার ৭০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন। মোট কর্মীর অর্ধেককে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে সংস্থা বলেছে, “আয়ের নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে। নইলে আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে পারবে না টুইটার।”