নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে করা ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য ‘সাদরে গ্রহণ’ করেছে চিন।
চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিকদের বলেন, “গত ২০০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারত ও চিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে সভ্যতার উন্নয়ন ও মানবজাতির অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে।”
মোদীর আমেরিকান পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের পরেই চিনের এই মন্তব্য। ওই পডকাস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার পর ভারত-চিন সীমান্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। তিনি আরও বলেন, মতপার্থক্য যাতে বিরোধে রূপ না নেয়, এটাই নিশ্চিত করতে চায় তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল এই পার্থক্যগুলো যেন বিরোধে পরিণত না হয়। আমরা এটাতেই মনোযোগ দিচ্ছি। মতবিরোধের পরিবর্তে আমরা আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছি, কারণ শুধু পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব, যা উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে।”
চিনা মুখপাত্র জানান, গত অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফল বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশের ইঙ্গিত দিয়েছে।
২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে সংঘর্ষের পর দীর্ঘ চার বছর সীমান্ত টহল বন্ধ থাকার পর, গত বছর নভেম্বর থেকে ভারত ও চিনের সেনারা পুনরায় টহল দেওয়া শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা সত্যি যে আমাদের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্কিত মতবিরোধ রয়েছে এবং ২০২০ সালে সীমান্তে সংঘর্ষ আমাদের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছিল। তবে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর আমরা সীমান্তে স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে দেখেছি।”
চিনা মুখপাত্র আরও বলেন, উভয় দেশই গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সমঝোতা মেনে চলছে, যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে।
তাঁর কথায়, বিশ্বের দুই বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত ও চিন তাদের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করছে এবং একে অপরের সাফল্যকে সমর্থন করছে। এটি ২.৮ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করে, আঞ্চলিক দেশগুলোর অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায় এবং বিশ্ব শান্তির জন্য সহায়ক।
বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সাম্প্রতিক মন্তব্যের রেশ টেনে তিনি বলেন, “ভারত ও চিন একে অপরের সাফল্যের অংশীদার হওয়া উচিত এবং ‘ড্রাগন ও হাতির ব্যালে নৃত্য’— অর্থাৎ একটি সমবায় সহযোগিতামূলক পথ-ই একমাত্র বিকল্প”।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যৌথ সমঝোতা বাস্তবায়নে তৈরি চিন। তাঁরাও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল ও সুস্থ পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমাদের সহযোগিতা শুধু পারস্পরিক কল্যাণকর নয়, এটি বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যও অপরিহার্য।”