দশক ধরে এক নিঃশব্দ যুদ্ধ চলছে পাকিস্তানের বালোচিস্তানে। লড়াই শুধুমাত্র ভূখণ্ডের নয়—এটা অস্তিত্ব, পরিচয় এবং মর্যাদার। সেই যুদ্ধে এবার স্পষ্ট বার্তা দিল বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)।
সম্প্রতি সংগঠনটি একযোগে ৭১টি হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বালোচিস্তানের ৫১টিরও বেশি স্থানে। ‘অপারেশন হিরোফ’ নামে পরিচিত এই অভিযানে নিশানা করা হয়েছে সেনা ঘাঁটি, গোয়েন্দা দফতর, পুলিশ স্টেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে। এই হামলাগুলি শুধুমাত্র সামরিক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তা বলেই দাবি করেছে BLA।
কৌশলগত ফাঁক: অভিযোগ
BLA-র এক বিবৃতিতে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ভারতের উদ্দেশে সরাসরি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তানের শান্তির প্রস্তাব, যুদ্ধবিরতি বা ভ্রাতৃত্বের কথা—সবই একটি প্রতারণা। এটা কৌশলগত ফাঁদ।”
সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান একদিকে ভারতের সঙ্গে শান্তির বার্তা দিচ্ছে, অথচ অন্যদিকে লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দিচ্ছে। ভারত এবং আন্তর্জাতিক মহলকে “চূড়ান্ত পদক্ষেপ” নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে, তারা সতর্ক করেছে—এই দ্বিচারিতা সহ্য করা মানে গোটা বিশ্বের ধ্বংস ডেকে আনা।
BLA নিজেদের “দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি” বলেও ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, কেচ, পাঞ্জগুর, মাস্তুং, কোয়েটা, জামুরান, তুলাঙ্গি, কুলুকি ও নুশকিতে তারা সফল হামলা চালিয়েছে।
হামলার ধরন
এই হামলাগুলির ধরন ছিল:
- অ্যামবুশ ও আইইডি বিস্ফোরণ
- স্নাইপার হামলা ও টার্গেট কিলিং
- খনিজ পরিবহণকারী গাড়ি ধ্বংস
- নিরাপত্তা পোস্ট দখল
এই বড়সড় হামলা এসেছে এক সময়ে, যখন ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাক অধিকৃত অঞ্চলে জঙ্গিঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে, পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জবাবে।
ভারত বরাবরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে এসেছে। এবার সেই অভিযোগই পাকিস্তানের ভেতর থেকে তুলল BLA।
দীর্ঘদিনের সংগ্রাম
১৯৪৮ সালে বলপূর্বক সংযুক্তিকরণের অভিযোগ, রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চনা, প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ, এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বালোচ জনগণ সংগ্রাম করে চলেছে।
পাকিস্তানে নিষিদ্ধ BLA-কে যুক্তরাজ্য সহ বহু দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সমর্থকদের মতে, এটি একটি প্রতিরোধ আন্দোলন, যা মানবাধিকার ও সার্বভৌমত্বের দাবিতে লড়ছে।
Amnesty International এবং Human Rights Watch-এর তথ্য অনুসারে, হাজার হাজার বালোচ ছাত্র, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের অনেকেই কখনো বিচার পাননি।
BLA-র এই সাম্প্রতিক বার্তা শুধুমাত্র স্বাধীনতার দাবি নয়—এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিপীড়নকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার একটি কৌশল।
ভারত এই বার্তার প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া না দিলেও, কূটনৈতিক দিক থেকে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে।