মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে চিনের সরকার। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-য় এই শুল্কের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে। চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাণিজ্যিক নিয়মবিধি লঙ্ঘন করেছে এবং তারা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, নতুন শুল্কের ফলে ডব্লিউটিও-র নিয়মাবলির গুরুতর লঙ্ঘন হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্তটি শুধু চিন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও বিপর্যস্ত করবে।
এদিকে, আমেরিকার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান না করে চিনকে লক্ষ্য করে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে চিন অভিযোগ করেছে। চিনের অর্থনৈতিক অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে এবং ওষুধের সংকট সহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রক।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর এই শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তি দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রিকিউরসরের প্রবাহ রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে চিন। ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্কগুলি জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ এবং অবৈধ মাদক এবং অভিবাসী সমস্যা মোকাবিলার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রতিবাদ
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুল্ক আরোপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা করেছেন। ট্রুডো বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত কানাডিয়ানদের ক্ষতি করবে, তবে আমেরিকানদেরও ক্ষতি করবে।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, বিশেষত অটো শিল্প এ ধরনের শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মেক্সিকোও প্রতিবাদ জানিয়ে শুল্ক আরোপের পাশাপাশি অ-শুল্ক সম্পর্কিত পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, তাদের সরকারের উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ও সংলাপ বজায় রাখা, বিরোধিতা নয়।
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব
শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাণিজ্য যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্তির বেশিরভাগ সময় ধরেই যা ঘটে চলেছে। তবে এই সিদ্ধান্তগুলো শুধুমাত্র চিনের পণ্য সম্পর্কিত নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের উপরও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চিন, কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে এবং এটির পরিণতি হয়তো বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সরবরাহে বিঘ্ন এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে ধীরগতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডব্লিউটিও-তে মামলার ফল এবং দেশগুলো যদি তাদের বাণিজ্যিক অমিল সমাধান করতে পারে, তবে তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।