তুরস্কে অভ্যুত্থানের চেষ্টা, নিহত ২৬৫

0

খবর অনলাইন: সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টায় রক্তাক্ত হল তুরস্ক। প্রাণ গিয়েছে ২৬৫ জনের, আহত ১১০০-এরও বেশি। এঁদের মধ্যে অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ১৭ জন সেনা অফিসারও রয়েছেন। রাজধানী আংকারা, ইস্তানবুল-সহ বিভিন্ন শহরে বোমা ফেলা হয়েছে, বিমানহানা হয়েছে, গোলাগুলি চলেছে। ছুটি কাটানো বাতিল করে প্রেসিডেন্ট রেসেপ এরদোগান ইস্তানবুল পৌঁছেছেন। তিনি অভ্যুত্থানের এই প্রচেষ্টাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তুরস্কের রেড ক্রেসেন্ট জানিয়েছে, সারা রাতব্যাপী হিংসাত্মক ঘটনায় আহত ৮০০ জনকে আংকারার হাসপাতালে এবং ২০০ জনকে ইস্তানবুলের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর সরকারই ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে আছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া শেষ খবরে জানা গিয়েছে, বিদ্রোহী সেনাদের একাংশ আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছে। ১৫৬৩ সেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, ইস্তানবুলে বসফরাস সেতুর উপর দিয়ে বেশ কিছু সৈনিক ট্যাঙ্ক নিয়ে হাত তুলে চলেছেন। সকাল ৯টা নাগাদ দেখা যায়, ইস্তানবুলের রাস্তায় গত রাতের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চিহ্ন এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেনারা ট্যাঙ্ক ফেলে চলে গিয়েছে। সেগুলো দখল করে প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছেন।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সন্ধ্যায়। রাজধানী আংকারা, ইস্তানবুল-সহ দেশের বেশ কিছু শহরের দখল নিতে শুরু করে সেনা। ইস্তানবুলের গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলিতে সেনা ট্যাঙ্ক পজিশন নেয়। সেতুগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রচুর সেনাকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। রাজধানী আংকারার উপর দিয়ে সামরিক জেট উড়ে যায়। আংকারায় তুরস্কের পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে আক্রমণ চালানো হয়। পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সে বোমা ছোড়া হয়। সেনা ট্যাঙ্ক ইস্তানবুল বিমানবন্দর ঘিরে ফেলে। ইস্তানবুলে পুলিশের সদর দফতরের বাইরে গোলাগুলি চলে। তুরস্কের টেলিভিশন সিএনএন তুর্ক দখল করে নেয় অভ্যুত্থানকারীরা। টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। সেনাবাহিনীর একটি গোষ্ঠী ঘোষণা করে, ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাচ্ছে। কারফিউ ও সামরিক আইন জারি করা হবে। ওই গোষ্ঠী জানায়, দেশে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা’ ফিরিয়ে আনতে এই অভ্যুত্থান করা হয়েছে। চলতি সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ আইনের শাসন ক্রমশই ধ্বংস হচ্ছে। শীঘ্রই দেশে নতুন সংবিধান চালু করা হবে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান দক্ষিণ-পশ্চিমের অবকাশযাপন কেন্দ্র মারমারিসে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তিনি খবর পেয়েই ইস্তানবুল উড়ে আসেন। এরদোগান চলে আসার পর মারমারিসে বোমা ফেলা হয়। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, “মানুষের ক্ষমতার উপরে কোনও ক্ষমতাকে আমি বিশ্বাস করি না।” প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে যায়। এর পরই অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বেধে যায়।

ও দিকে সেনাপ্রধান হুলুসি আকারকে বিদ্রোহীরা আটক করে রেখেছিল বলে জানা যায়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানকারীরা যে সব বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে সেগুলি গুলি করে নামানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। অভ্যুত্থানকারীদের ব্যবহৃত একটি হেলিকপ্টার গুলি করে নামানো হলে ১৭ বিদ্রোহী সেনা অফিসার প্রাণ হারান।

এখনও দেশের ছবিটা ঠিক পরিষ্কার নয়। তবে বিদেশ দফতর জানিয়েছে, “তুর্কি জনগণের ঐক্য ও সংহতিই অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা বানচাল করে দিয়েছে। দেশের দায়িত্বে আমাদের প্রেসিডেন্ট ও সরকারই রয়েছেন।” ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিমান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত ছিল। সকাল থেকে আবার বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার কথা।

কারা তুরস্কে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করল তা কিন্তু এখনও পরিষ্কার নয়। তুরস্ক বলেছে, সেনাবাহিনীর একটা অংশ এই চেষ্টা করেছিল। প্রেসিডেন্ট এরদোগান অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য একটি ‘সমান্তরাল কাঠামো’কে দায়ী করেছেন। অতীতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ইসলামি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেন-এর কথা বলতে গিয়ে এরদোগান এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন। তবে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ স্পষ্ট ভাবেই অস্বীকার করেছেন গুলেন।

ছবি: সৌজন্যে এএফপি   

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.