বুধবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লার সাথে সংঘর্ষে ৮ ইজরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, লেবানন সীমান্ত পার করে হিজবুল্লাকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানোর পর এটাই তাদের প্রথম বড় ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা।
বুধবার সকালে ইজরায়েলি বাহিনীর ক্যাপ্টেন এয়েতন ইৎঝাক ওস্টার (২২) লেবাননে সংঘর্ষের সময় নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, “ক্যাপ্টেন এয়েতন ইৎঝাক ওস্টার… লেবাননের যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।” তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অপরদিকে, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লা জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে প্রবেশ করা ইজরায়েলি সেনাদের সাথে লড়াই করেছে। দলটির দাবি, সীমান্তের আদায়েসহ গ্রামে ইজরায়েলি বাহিনী প্রবেশের চেষ্টা করলে হিজবুল্লার যোদ্ধারা তাদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইজরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপকভাবে হামলা শুরু করার পর এবারই প্রথম হিজবুল্লা জানিয়েছে যে লেবাননের মাটিতে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে হিজবুল্লার শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর থেকে লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
হিজবুল্লার মুখপাত্র মোহাম্মদ আফিফ জানিয়েছেন, ‘‘এটি সংঘাতের সূচনা মাত্র। দক্ষিণ লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লেবাননের প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং কোনও আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’’
অন্যদিকে, লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইজরায়েলি বাহিনী বুধবার সীমান্তবর্তী ‘ব্লু লাইন’ অতিক্রম করে প্রায় ৪০০ মিটার লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করেছিল। পরে তারা কিছু সময় পর সেখান থেকে সরে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের আরও কিছু এলাকা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০টিরও বেশি গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ ওইসব এলাকায় সংঘর্ষ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা
এদিনই, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ইজরায়েল ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে দেশটিতে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইজরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ বুধবার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ইরানের যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, সেটির পরিষ্কার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন মি. গুতেরেস।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ‘‘রাষ্ট্রসঙ্ঘ মহাসচিব ইসরায়েল-বিরোধী এবং সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও খুনিদের মদদদাতা। ভবিষ্যতে তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ইতিহাসে কলঙ্কিত হিসেবে আখ্যায়িত হবেন।’’
মঙ্গলবারই গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে, ইজরায়েলি মন্ত্রীদের মতে, গুতেরেসের অবস্থান ইজরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং তার এই আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে বাধা সৃষ্টি করছে।