খবর অনলাইন ডেস্ক: কুয়েতের ম্যানগাফ এলাকায় একটি ছ’তলা বাড়িতে আগুন লেগে ৪২ জন ভারতীয়-সহ অন্তত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে অন্তত ১১ জন কেরলের মানুষ। বাকি ভারতীয়রা গিয়েছেন তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে। মৃতদের বাকিরা পাকিস্তানি, ফিলিপিনো, মিশরীয় এবং নেপালি। এই দুর্ঘটনা নিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে কথা বলেন এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
আগুনে অন্তত ৫০ জন জখম হয়েছেন এবং তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর জানিয়েছেন। তিনি জানান, ভারতের রাষ্ট্রদূত ঘটনাস্থলে যান। জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ৩৫ জনকে আইসিইউ-তে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অন্তত ৫ জনকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুয়েত যাচ্ছেন। আগুনে আহত ভারতীয়দের সাহায্য এবং এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় মৃতদের দেহগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে নিয়ে আসার কাজে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সেখানে যাচ্ছেন।”
কী ভাবে আগুন লাগল
প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, আগুন লাগে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় অর্থাৎ ভারতীয় সময় সকাল ৯টায়। প্রথম আগুন লাগে ছ’তলা বাড়ির একটি রান্নাঘরে। তার পরে আগুন অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বাড়িতে অন্তত ১৯৫ জনের বাস। এঁরা সবাই একই কোম্পানির কর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন থেকে বাঁচতে অনেকেই পাঁচ তলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানান, “যে বাড়িতে আগুন লাগে সেই বাড়িটি শ্রমিক-কর্মীদের বাসস্থান ছিল। বহু কর্মী সেই বাড়িতে থাকেন। আগুন লাগার পর বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু অনেকেই আগুনে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা
মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘এক্স’ বার্তায় বলেছেন, “কুয়েত শহরে আগুন লাগার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যাঁরা তাঁদের আপনজনকে হারালেন, আমি তাঁদের কথাই ভাবছি। আহতরা যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, তার জন্য প্রার্থনা করছি। কুয়েতে ভারতের দূতাবাস পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।”
আগুনের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আগুনে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ফাহাদ ইউসুফ আল-সাবাহ ঘটনাস্থলে যান এবং এ ব্যাপারে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেন। ফৌজদারি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ির মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং কর্মীদের মালিককে আটক রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী। আইন ভেঙে কোনো বাড়িতে এরকম গাদাগাদি করে কর্মীদের রাখা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কুয়েত মিউনিসিপ্যালিটি এবং মানবসম্পদ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
হাসপাতালে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত
কুয়েতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আদর্শ সোয়াইকার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলা হয়েছে, “আগুনে জখম ৩০ জন ভারতীয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত আদর্শ সোয়াইকা আল-আদান হাসপাতালে যান এবং রোগীদের সঙ্গে দেখা করেন। ভারতীয় দূতাবাসের তরফ থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। মোটামুটি সকলের অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।”
আরও পড়ুন
চিনের চাল হবে কুপোকাত, শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বড় সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের