গ্রিসের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তেম্পি গিরিখাতে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫৭ জন নিহত ও বহু আহত হন।
এই ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজধানী এথেন্সসহ থেসালোনিকি, লারিসা, ইয়োইনিনা এবং অন্যান্য শহরে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আয়োজকদের মতে, এটি গ্রিসের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভ চলাকালীন এথেন্সের সংসদ ভবনের সামনে কিছু যুবক পাথর ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের জেরে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে মানবিক ভুল, দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যাপ্ত জনবলের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও জনমনে সন্দেহ রয়ে গেছে যে, সরকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দায় এড়ানোর জন্য বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দিমিত্রিস নামের এক ১৩ বছরের কিশোর বলেন, “আমি এখানে এসেছি নিহতদের স্মরণে, আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
শহরের প্রধান প্রধান দোকান বন্ধ রাখা হয়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল বন্ধ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ট্যাক্সি চালকরা বিনামূল্যে যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, “এই দুর্ঘটনার পর আর কিছুই আগের মতো থাকবে না। আমাদের সবার চিন্তা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে।”
তবে জনসাধারণের দাবি, সরকারের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেওয়া না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। গ্রিসজুড়ে ৩৪৬টি শহরে বিক্ষোভ আয়োজিত হয়েছে, এমনকি ইউরোপের অন্যান্য শহরেও সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বরাদ্দ করা কোটি কোটি ইউরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হয়নি। এতে দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতার ইঙ্গিত মিলেছে।
দুর্ঘটনায় নিহত দিমিত্রিস আসলানিদিসের বাবা বলেন, “আমি জানি না কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করছি, কিন্তু আমার ছেলেই আমাকে শক্তি দিচ্ছে। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।”