বিশ্বের অন্যতম ধনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির তহবিল বর্তমানে ৫৩.২ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৪,৪৫,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই বিশাল সম্পদ বহু দেশের জিডিপিকেও ছাড়িয়ে গেলেও, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ২২০ কোটি ডলারের কেন্দ্রীয় অনুদান স্থগিত হয়ে যাওয়ায় হার্ভার্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—এই বিশাল তহবিল থাকা সত্ত্বেও কেন তা দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়?
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে শিক্ষার্থীদের মতাদর্শ যাচাই করতে হবে এবং এমন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের গ্রহণ বন্ধ করতে হবে যারা ‘আমেরিকান মূল্যবোধ’-এর সঙ্গে মানানসই নন। হার্ভার্ড এই দাবি মানতে অস্বীকার করে। এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা জানায়, “বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার ছাড়বে না। কোনও ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে না।”
তাহলে প্রশ্ন—তাদের কোটি কোটি ডলারের তহবিল থাকা সত্ত্বেও তারা কেন সেই অর্থ ব্যবহার করে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারছে না?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হার্ভার্ডের এই তহবিল সাধারণ সঞ্চয় নয়, এটি বিভিন্ন দাতার দেওয়া অর্থ। এর বেশিরভাগই নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করার শর্তে দেওয়া হয়েছে। ভাসার কলেজের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ক্যাথারিন বন্ড হিল বলেন, “এটা তাৎক্ষণিক খরচ করার জন্য নয়, এটি এমনভাবে দেওয়া হয় যেন তার সুদ ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে নির্দিষ্ট কার্যক্রমে সহায়তা করা যায়।“
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি বিজনেস অফিসার্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লিজ ক্লার্কের মতে, এই তহবিল আসলে দাতাদের সঙ্গে করা একাধিক চুক্তির সমষ্টি। হার্ভার্ডে প্রতি বছর যে অর্থ বিতরণ হয়, তার প্রায় ৭০ শতাংশই নির্দিষ্ট স্কলারশিপ, শিক্ষক পদের বেতন অথবা গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া। discretionary খাতে ব্যবহারযোগ্য অর্থ থাকে মাত্র ২৫ শতাংশ।
গবেষণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনুদানের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ ও ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থাগুলি স্টেম, মেডিকেল ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গবেষণার জন্য অর্থ দেয়। ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেসিলিয়া অরফান বলেন, “এই ধরনের গবেষণার জন্য শুধু গবেষণা খরচই নয়, পরিকাঠামোগত সহায়তাও লাগে, যেটা সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় অনুদান থেকেই আসে।”
স্বল্পমেয়াদে হার্ভার্ডের তহবিল এই ধাক্কা কিছুটা সামলাতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে গবেষণার উপর। ক্যানসার, ন্যাশনাল সিকিউরিটি বা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যাহত হতে পারে বলে মত গবেষকদের।
এই ঘটনা ফের একবার সামনে নিয়ে এল ধনী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অর্থ ব্যবস্থার জটিলতা—যেখানে ব্যক্তি অনুদান, কেন্দ্রীয় সহায়তা ও সংস্থার স্বাধীনতা পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বিক হতে পারে।
ক্ষমা চাইতে হবে হার্ভাডকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার হুমকি দেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স-ফ্রি মর্যাদা বাতিল করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষমা চাওয়া উচিত। এর এক দিন আগেই হার্ভার্ড প্রশাসন ট্রাম্প সরকারের কথিত ‘অবৈধ দাবি’ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, শিক্ষাক্রমে রদবদল না করলে কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে—এমন চাপ তারা মেনে নেবে না।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে, দেশজুড়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালেস্তাইনপন্থী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। ২০২৩ সালে হামাসের নেতৃত্বে ইজরায়েলে হামলা এবং তার জবাবে গাজায় ইজরায়েলি আক্রমণের পর এই আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বহু মার্কিন ক্যাম্পাস।
ছাত্র ভর্তিও বন্ধের হুঁশিয়ারি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি না মানলে বিদেশি ছাত্র ভর্তি করানোর অধিকার হারাবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে এটাই সবচেয়ে বড় হুঁশিয়ারি।
বুধবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম আরও ঘোষণা করেন, হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত দুইটি অনুদান, যার মোট পরিমাণ ২৭ লাখ ডলারেরও বেশি, তা বাতিল করা হয়েছে।
নোম জানান, হার্ভার্ডের বিদেশি ছাত্রদের ‘অবৈধ ও সহিংস কার্যকলাপ’ সম্পর্কিত নথিপত্র ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।