হেজবোল্লার প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে চলেছে। ইজরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হানায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ইজরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে। যদিও হেজবোল্লার পক্ষ থেকে এই খবর মেনে নেওয়া হয়েছে। লেবানন এবং গোটা অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা করবে এই মৃত্যু, তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হেজবোল্লার বর্তমান পরিস্থিতি
হাসান নাসরাল্লাহ ছিলেন হেজবোল্লার অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী নেতা। ইরানের মদতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেবানন থেকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে আসছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে হেজবোল্লা কেবল একটি সামরিক গোষ্ঠী নয়, বরং লেবাননের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতেও পরিণত হয়েছে। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে হেজবোল্লার নেতৃত্ব কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পরে এখন শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। সম্ভাব্য নেতা হিসেবে সামনে এসেছে শেইখ নাবিল কাউক এবং শেখ মুস্তফা আল-কাবালানের নাম।
মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির পরিবর্তন
হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ইরান-সমর্থিত হেজবোল্লা লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে থাকে। তাঁর মৃত্যুতে ইরানের অবস্থান এবং ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বদলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এই পরিস্থিতিকে আরও বেশি করে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে এবং অন্য কোনও শক্তিশালী নেতাকে সামনে এনে হেজবোল্লার কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবে।
ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ইজরায়েলি বাহিনীর দাবি, নাসরাল্লাহর মৃত্যু তাদের সামরিক কৌশলের একটি বড় সাফল্য। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “নাসরাল্লাহর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের শেকড় দুর্বল করবে এবং আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।” তবে তাঁর মৃত্যু হেজবোল্লার পক্ষে প্রতিশোধের কারণ হয়ে উঠতে পারে, যা ইজরায়েল ও লেবাননের মধ্যে আরও বড় সংঘাতের সূচনা ঘটাতে পারে।
These buildings have been wiped out.
— 🟢or keren (@Wq0oQJmUSfZunt5) September 27, 2024
The main target of the attack as I hinted above was Hezbullah's SG Sayyed Hassan Nasrallah pic.twitter.com/OYspB9yJeT
লেবাননের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই অস্থির। নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে হেজবোল্লার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যার ফলে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও অশান্তির ঝড় তুলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, শিয়া সম্প্রদায়ের একাংশ এবং অন্যান্য মিত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু শুধু হেজবোল্লা নয়, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যদি ইরান হেজবোল্লার নেতৃত্বে নতুন শক্তিশালী নেতা প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল দুর্বল হতে পারে। অন্যদিকে, ইজরায়েল এই পরিস্থিতিকে তাদের কৌশলগত সুবিধার জন্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে।
পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত এবং আগামী কয়েকদিনে হেজবোল্লার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। তবে যা-ই হোক, নাসরাল্লাহর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, যা ভবিষ্যতের আঞ্চলিক সংঘাত এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে।