হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ইরানের পাল্টা মিসাইল হামলার পর এবার ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে, দু’দেশের সংঘাতে এক ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, সামরিক ক্ষমতার নিরিখে ইরান রয়েছে বিশ্বের ১৪তম স্থানে, অন্যদিকে ইসরায়েল ১৭তম। যদিও সামগ্রিক শক্তিতে এগিয়ে ইরান, তবে নির্দিষ্ট খাতে ইসরায়েলের আধিপত্যও স্পষ্ট।
প্রতিরক্ষা বাজেট
ইসরায়েল বার্ষিক প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে প্রায় ২৪৪০ কোটি ডলার, যেখানে ইরানের বরাদ্দ ৯৯৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ইসরায়েল এখানে ইরানের প্রায় দ্বিগুণ বেশি ব্যয় করে।
সেনা সংখ্যা
ইরান ১১.৮ লাখ সেনার শক্তি নিয়ে ইসরায়েলের ৬.৭ লাখ সেনার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। রিজার্ভ সেনার ক্ষেত্রেও ইরান পিছিয়ে নেই—তাদের রয়েছে ৩.৫ লাখ, আর ইসরায়েলের ৪.৬৫ লাখ।
বিমান শক্তি
সামগ্রিকভাবে ইসরায়েলের সামরিক বিমান সংখ্যা (৬১২টি) ইরানের (৫৫১টি) চেয়ে বেশি। যুদ্ধবিমান, আক্রমণাত্মক বিমান এবং প্রশিক্ষণ বিমানের সংখ্যাতেও ইসরায়েল এগিয়ে। তবে পরিবহন বিমানে (৮৬টি) ইরান অনেকটাই এগিয়ে ইসরায়েলের তুলনায় (১২টি)।
হেলিকপ্টার
ইসরায়েলের রয়েছে ১৪৬টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৪৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ইরানের হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১২৯টি, যার মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার মাত্র ১৩টি।
সাঁজোয়া ও ট্যাঙ্ক শক্তি
এই খাতে ইরানের আধিপত্য স্পষ্ট। ইরানের ট্যাঙ্ক ১৯৯৬টি, যেখানে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক রয়েছে ১৩৭০টি।
সাঁজোয়া যানেও ইরান অনেক এগিয়ে—৬৫,৭৬৫টি বনাম ইসরায়েলের ৪৩,৪০৩টি।
আর্টিলারি ও রকেট সিস্টেম
ইরানের সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ৫৮০টি, আর এমএলআরএস ৭৭৫টি। অন্যদিকে ইসরায়েলের রয়েছে ৬৫০টি সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ও ১৫০টি এমএলআরএস। রকেট প্রযুক্তিতে ইরানের আধিপত্য স্পষ্ট।
যদিও সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় ইরান এগিয়ে, তবে ইসরায়েলের প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন তাদের কৌশলগতভাবে শক্তিশালী করে তোলে। এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুধু অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যকেই প্রভাবিত করতে পারে।