পুনরায় উত্তাল আন্তর্জাতিক জলসীমা। জলপথে গাজা অভিমুখে রওনা হওয়া একটি মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আটকাল ইজরায়েলি সেনারা। জাহাজটিতে ছিলেন বিখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান-সহ একাধিক মানবাধিকার কর্মী।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (FFC)-এর তরফে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ২টার পর আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইজরায়েলি সেনারা জাহাজটিতে হানা দেয়। রিমা হাসান এক্স-এ একটি ছবি শেয়ার করে দেখান, জাহাজের যাত্রীরা লাইফজ্যাকেট পরে হাত তুলে বসে রয়েছেন, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশ করে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা দাবি করেছে, যাত্রীদের ‘অপহরণ’ করেছে ইজরায়েলি বাহিনী এবং জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইতালির সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ব্রিটিশ পতাকাবাহী এই মানবিক জাহাজ। গাজার ওপর দীর্ঘদিনের নৌ অবরোধ চ্যালেঞ্জ করে কিছু প্রতীকী ত্রাণ যেমন চাল ও শিশুখাদ্য পৌঁছে দেওয়াই ছিল জাহাজটির লক্ষ্য।
অন্যদিকে, ইজরায়েলি বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, “সেলিব্রিটির সেলফি ইয়ট” ‘ম্যাডলিন’ এখন ইজরায়েলের উপকূলের দিকে নিরাপদে এগোচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, “এই অভিযান মূলত প্রচার পাওয়ার জন্য, যেখানে ত্রাণের পরিমাণ ছিল এক ট্রাকেরও কম।”
টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র গাই নির বলেন, “ওরা ত্রাণের সঙ্গে অন্য কিছুও নিয়ে আসতে পারে, যেমন অস্ত্রশস্ত্র। তাই সব ত্রাণসামগ্রীর মতো এটাও পরীক্ষা করতে হবে। সেলিব্রিটি থাকলেই বিশেষ ছাড় মিলবে না।”
এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘ম্যাডলিন’কে যে কোনো মূল্যে থামানোর। তিনি বলেছিলেন, “প্রয়োজনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
FFC পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, “ইজরায়েলের এই সমুদ্র অবরোধ বেআইনি। আমরা ভয় পাই না। ‘ম্যাডলিন’ একটি নিরস্ত্র মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজ। আন্তর্জাতিক জলসীমায় একে বাধা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।”
উল্লেখ্য, এটি ছিল ফ্রিডম ফ্লোটিলার দ্বিতীয় অভিযান। এর আগে ‘Conscience’ নামের একটি জাহাজ মে মাসে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করলেও আন্তর্জাতিক জলসীমায় ড্রোন হামলার পর তা ব্যর্থ হয়। ওই হামলার জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করলেও, ইজরায়েল তা স্বীকার করেনি।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মানবিক সহায়তার নামে বাধা, নৌ অবরোধ, ও সেলিব্রিটি উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।