প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হওয়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উঠে এসেছে কলকাতায় একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনার কথা। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই বিষয়ে জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বর্তমানে কোয়াড (QUAD) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের নেতারা অংশগ্রহণ করছেন। এরই ফাঁকে বাইডেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষত, কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে উভয়ের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
এই উদ্যোগ শুধু ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে নয়, একই সঙ্গে দুই দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চাইছে। এশিয়ার প্রযুক্তিগত হাবে পরিণত হতে কলকাতা যে বড় ভূমিকা নিতে পারে, তা এই বৈঠক থেকেই পরিষ্কার হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, বৈঠকে কৌশলগত সম্পর্ক, নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রযুক্তি বিনিময়, এবং উদীয়মান খাতগুলিতে সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে ছিল:
কোয়াড সহযোগিতা: কোয়াড (QUAD) সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও নিবিড় সহযোগিতা করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা: ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে উভয় দেশই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষত, প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের কথাও উঠে এসেছে।
অর্থনীতি এবং বাণিজ্য: দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিশেষত প্রযুক্তি এবং উৎপাদন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা ছাড়াও আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করার উদ্দেশ্যে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির বিকাশ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশই গ্রিন টেকনোলজি এবং পরিবেশ সচেতন উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
মহাকাশ প্রযুক্তি: মহাকাশ প্রযুক্তিতে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক উদ্ভাবন বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত ও আমেরিকার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।