ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে চিনা পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর। এই পরিস্থিতিতে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত ও চিনের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বলছেন, উভয় দেশকে “আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে”।
বেজিংয়ে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বৈঠকের পর শুক্রবার ওয়াং ই বলেন, “এলিফ্যান্ট ও ড্রাগনের নাচ বাস্তবে পরিণত করাই একমাত্র সঠিক পথ।” তিনি আরও বলেন, “পরস্পরকে সমর্থন করা, একে অপরকে দুর্বল না করা এবং সহযোগিতা জোরদার করাই দুই দেশের মৌলিক স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
ভারতের প্রতি এক বড় কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে ওয়াং ই-এর এই বক্তব্য। যেখানে তিনি বলেছেন, “ভারত ও চিন একত্র হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সরলীকরণ ও ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উন্নয়ন আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পাবে।”
ভারত এখনো চিনের এই আহ্বানে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ও চিন সম্পর্ককে আরও ইতিবাচক করার জন্য কাজ করছে। যার মধ্যে তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু করা, সরাসরি ফ্লাইট চালু করার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারতের প্রতি নতুন কৌশল চিনের?
বেজিংয়ের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ওয়াং ই বলেছেন, গত বছর উভয় দেশের মধ্যে “ইতিবাচক অগ্রগতি” হয়েছে, বিশেষ করে লাদাখের দেপসাং ও ডেমচোক অঞ্চলে সামরিক সরলীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরপর অক্টোবর মাসে রাশিয়ার কাজানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদা ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠক করেন এবং ডিসেম্বরে বেজিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াং ই।
সীমান্ত সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কখনো সীমান্ত সমস্যার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করতে পারি না বা কিছু নির্দিষ্ট মতপার্থক্যকে সামগ্রিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে দিতে পারি না।”
মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধ
এ দিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, যাতে তারা ফেন্টানিল রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনে।
চিন দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য—সয়াবিন, শুকরের মাংস ও গমের ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ দায়ের করেছে। চিনের অভিযোগ, “এই একতরফা শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করছে এবং চিন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করছে।”
চিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে “ফাঁপা অজুহাত” বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে, “যদি যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায়—হোক তা শুল্ক, বাণিজ্য বা অন্য কিছু—তাহলে চিন শেষ পর্যন্ত লড়তে প্রস্তুত।”