বুধবার দলাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎ মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের। উচ্চ-পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন মার্কিন সংসদের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং ডি-ক্যালিফের মতো ব্যক্তিত্ব। কয়েক দশক ধরে দলাই লামা ভারতে রয়েছেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দলটি। যদিও, এই সাক্ষাৎ নিয়ে আগেভাগেই নিন্দা করেছিল চিন। কারণ, তিব্বতের নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলেই বিবেচনা করছে চিনা প্রশাসন।
আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে মাইকেল ম্যাককলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবারই হিমালয় শহর ধর্মশালায় পৌঁছে যায়। যেখানে ১৯৬০ সাল থেকে বাস করছেন দলাই লামা। সেখানেই তারা দলাই লামার সঙ্গে এ দিন সাক্ষাৎ করে। এ ছাড়াও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নির্বাসিত তিব্বত সরকারের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এই কার্যালয় থেকেই তিব্বতে স্বায়ত্তশাসনের জন্য চিনের উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
ও দিকে, কয়েক দিন আগেই মার্কিন কংগ্রেস দ্বিদলীয় সমর্থন-সহ একটি বিল পাশ করেছে। যেখানে, দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটাতে তিব্বতের নেতাদের সঙ্গে চিনকে আলোচনায় বসার অনুরোধ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ওই বিল পাশের কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কূটনৈতিক মহলের মতে, মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফর নিয়ে চিনের আগাম সমালোচনা বেশ আশ্চর্যজনক। চিনা প্রশাসন তিব্বতের নির্বাসিত সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে তিব্বতকে সমর্থন করা মানে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলেও মনে করে। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির চিনা দূতাবাসের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল, দলাই লামার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ এক কথায় চিন-বিরোধী। এ ভাবে বিশ্বকে ভুল বার্তা পাঠানো বন্ধ করুক আমেরিকা।
তবে, এই প্রথম বার নয়, মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগেও একাধিক বার দলাই লামার সঙ্গে দেখা করেছেন। এখন যখন, ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লি নিজেদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার দিকে এগোচ্ছে, তখন এই সফরটি বিশেষ ভাবে ইঙ্গিতবাহী। তা ছাড়া চলতি সপ্তাহে ভারতে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে তিনি দফায় দফায় আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন নয়াদিল্লিতে।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোট এবং তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রত্যাবর্তনের পর আমেরিকার এই পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কতটা আগ্রহী, তারই ইঙ্গিত দেয় এই পদক্ষেপ। আর উল্টো দিকে, ক্রমশ বেজিংয়ের বিপরীত অবস্থান নিচ্ছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
অন্য দিকে,তিব্বতের পরিস্থিতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘কোণ’ দিয়ে দেখা উচিত নয় বলে দাবি করেছেন নির্বাসিত তিব্বত প্রশাসনের মুখপাত্র তেনজিন লোকেশ। তাঁর কথায়, চিন এই অঞ্চলকে কবজা করেছে। তিব্বতিদের জীবন কী ভাবে কাটছে, তাঁরা কী রকম হুমকির মুখোমুখি, সেগুলি ভাবা উচিত। লোকেশ বলেন, “আমরা আশা করি, মুক্ত বিশ্বের নেতারা তিব্বতের পাশে দাঁড়াবেন। বিশেষ করে, চিন-তিব্বত সংঘাত মেটাতে আলোচনায় বসার জন্য চিনা প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াবেন।”
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে তীব্র গরমে সাড়ে ৫০০ জন হজযাত্রীর মৃত্যু