দেড় বছরের মধ্যেই নেপালে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার নেপালের পার্লামেন্টের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে আস্থা ভোটে হেরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহাল ওরফে প্রচণ্ড। আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন প্রচণ্ড। নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অন্তর্বতী পদে থাকবেন।
প্রচণ্ডের সরকারের উপর থেকে বুধবার সমর্থন প্রত্যাহার করে কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল)। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা নেপালি কংগ্রেসের প্রধান শের বাহাদুর দেউবার সঙ্গে জোট সরকার গড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ওলির দল।
নেপাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের আসন সংখ্যা ২৭৫। এর মধ্যে দেউবার নেপালি কংগ্রেসের ৮৮টি এবং ওলির সিপিএন (ইউএমএল)-এর ৭৯টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ দু’দল মিলে গেলে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৮ আসনের জাদু সংখ্যা ছোঁয়া সম্ভব। অন্যদিকে, প্রচণ্ডের দল সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার)-এর ৩২ জন সদস্য রয়েছে। মাওবাদীদের দুই সহযোগী দল, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্রতা পার্টির ২১ জন এবং সিপিএম (ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট)-এর ১০ জন সদস্য রয়েছে। আস্থা ভোটে মাত্র ৬৩ জনের সমর্থন পান প্রচণ্ড।
ওলির সঙ্গে হাত মিলিয়েই প্রধানমন্ত্রী
২০২২ সালের নভেম্বরে নেপালের সাধারণ নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে প্রচণ্ডের মাওয়িস্ট সেন্টার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু নির্বাচনে জেতার পরেই দেউবাকে ছেড়ে ওলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন প্রচণ্ড। ২০২৩-এর মধ্যভাগে ওলির সঙ্গে মতবিরোধের সময়ে দেউবার সমর্থন নিয়ে কাঠমান্ডুর কুর্সি বাঁচিয়েছিলেন একদা গেরিলা যোদ্ধা। কিন্তু এবার ‘চিনপন্থী’ ওলি ‘জাতীয়তাবাদী’ দেউবার সঙ্গে হাত মেলানোয় আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসাবে প্রচণ্ড ব্যাকফুটে চলে গেছেন।
১৪ বছরে ১৩ বার প্রধানমন্ত্রী বদল
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকে নেপালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেছিল মাওবাদীরা, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রচণ্ড। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর, দেড় দশক আগে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। তবে এরপর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার এই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নেপালে ১৩ বার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। প্রচণ্ড সরকারের এটা পঞ্চমবার আস্থা ভোটের পরীক্ষা যাত তিনি পরাজিত হলেন।
কে এই কেপি শর্মা ওলি
কেপি শর্মা ওলি নেপালের অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল)-এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত। ওলি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন ২০১৫ সালে, যখন নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। তার প্রথম মেয়াদ ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।
কেপি শর্মা ওলি তিনবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অক্টোবর ২০১৫ থেকে আগস্ট ২০১৬, ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে মে ২০১৮, মে ২০১৮ থেকে জুলাই ২০২১ পর্যন্ত।
কেপি শর্মা ওলির রাজনৈতিক জীবন বিতর্ক এবং কৃতিত্বের মিশেলে পূর্ণ। তাঁর সময়কালে নেপাল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তাঁর প্রধান কূটনৈতিক অর্জন ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তার সময়কালে, নেপাল বেশ কয়েকটি পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে হাত দেয় এবং চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেয়।
ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত বিবাদের সময়ে, ওলির নেতৃত্বে নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশিত হয়, যা বিতর্কিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তি দেখায়।
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলীয় বিরোধের ফলে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ একাধিকবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।