লেবাননে স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুত ইজরায়েল, প্রয়োজনে হামলা চালানো হবে: রুভেন আজার
নয়াদিল্লি: ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার বুধবার লেবানন সীমান্তে চলমান সংঘাত নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালাতে প্রস্তুত ইজরায়েল। বর্তমানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইজরায়েলের সামরিক প্রস্তুতির দিকটি তিনি স্পষ্ট করেন। তিনি জানিয়েছেন, হিজবুল্লার হুমকি প্রতিহত করতে ইজরায়েল সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
একান্ত সাক্ষাৎকারে আজার বলেন, ইজরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হল হিজবুল্লার কর্মকাণ্ড থামানো, যা তিনি উল্লেখ করেছেন ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর এক অপ্ররোচিত হামলার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ইজরায়েল দীর্ঘ ১১ মাস ধরে একটি যুদ্ধবিরতি অর্জনের চেষ্টা করছে। তবে হিজবুল্লার অব্যাহত আক্রমণ ও অস্ত্রসম্ভারের কারণে এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
আজার জানান, “আমরা ইতিমধ্যে হিজবুল্লার ১,৭০০টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছি। তারা অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে,” এভাবেই ইজরায়েলের শক্তি প্রয়োগকে তিনি সমর্থন করেন।
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলের মানবিক পদক্ষেপের বিষয়টি আজার বিশেষভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, ইজরায়েল স্থানীয় বাসিন্দাদের আগাম সতর্কতা দিয়ে এলাকায় হামলা চালাচ্ছে, যাতে তারা নিরাপদে সরিয়ে যেতে পারেন। এর ফলে তুলনামূলকভাবে কম হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন।
আজার বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছি। তবে প্রয়োজন হলে আমরা পুরো মাত্রায় যুদ্ধেও যেতে প্রস্তুত।” তবে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ইজরায়েল সংঘাতের চাইতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী।
ইরানের হুমকি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা
লেবাননে চলমান সংঘাতের পেছনে ইরানের ভূমিকার বিষয়ে আজার স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, ইরান দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। ইরানের এমন পদক্ষেপকে তিনি আঞ্চলিক শান্তির জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আজার বলেন, “ইরান মনে করেছিল তারা ইজরায়েলকে চাপে ফেলতে পারবে, কিন্তু তারা ভুল করেছে।” ইরানের মিত্র হিসেবে হিজবুল্লা, হামাস ও হুথিদের ব্যবহার করে তাদের আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের কৌশল সম্পর্কে আজার কড়া সমালোচনা করেন।
হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যার পর ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রশ্নে আজার সরাসরি উত্তর দেন। তিনি জানান, ইজরায়েল অতীতেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে এবং ভবিষ্যতেও সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, “ইরান যদি সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায়, তবে তারা একটি বড় ভুল করবে।”
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভারতের ভূমিকা
আজার ইজরায়েল ও হিজবুল্লার চলমান সংঘাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা তিনি উল্লেখ করেন। এই সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ভারতের ভূমিকাও এই প্রসঙ্গে আজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রয়েছে। আজার জানান, “মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়।”
আজার আরও উল্লেখ করেন, “যখন এই সংঘাত শেষ হবে, আমরা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা আবার শুরু করতে পারব। এতে ভারত প্রধান ভূমিকা পালন করবে।”
হিজবুল্লার বিরুদ্ধে অভিযান
সাক্ষাৎকারে আজার স্পষ্ট করেছেন যে, ইজরায়েল হিজবুল্লার হুমকির মুখে শক্ত অবস্থান নেবে এবং প্রয়োজনে স্থল অভিযান পরিচালনা করতে দ্বিধা করবে না। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইজরায়েলের লক্ষ্য কখনও যুদ্ধ নয়, বরং আত্মরক্ষা ও আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করা।
ইজরায়েল এবং হিজবুল্লার মধ্যে চলমান এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে আরও বৃহত্তর সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে ইজরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আরব রাষ্ট্র এবং ভারতের যৌথ প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি সম্ভাব্য সমাধান আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।