প্যারিস: ফ্রান্সে বামপন্থীরা বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে এল। রবিবার ফরাসি সংসদের দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে সকলকে চমকে দিয়ে অতি দক্ষিণপন্থীদের আশায় জল ঢেলে দিল বামপন্থীরা। ৫৭৭ সদস্যের সংসদে বামপন্থীদের জোট ‘ন্যুভো ফ্রঁ পপুল্যেয়ার’ (এনএফপি) তথা নিউ পপুলার ফ্রন্ট জিতল ১৮২টি আসনে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরেঁর মধ্যপন্থী জোট ‘অঁসব্লঁ আলিয়াঁস’ তথা এনসেম্বল্ আল্যায়েন্স পেল ১৬৩টি আসন এবং অতি দক্ষিণপন্থীদের জোট ‘রাসব্লঁমঁ নাৎশনাল’ (আরএন) তথা ন্যাশনাল র্যালি জিতেছে ১৪৩টি আসনে।
সরকার গড়তে হলে কোনো দল বা জোটকে সংসদের অন্তত ২৮৯টি আসন জিততেই হবে। আপাতত কোনো জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ত্রিশঙ্কু সংসদ তৈরি হল। দ্বিতীয় দফার ফলের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গাব্রিয়েল অত্তল সোমবার সকালেই তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাঁর দলের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ গ্রহণ করেননি। “দেশের সুস্থিতি সুনিশ্চিত করার জন্য আপাতত” ওই পদে থাকার জন্য তাঁর দলের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন মাকরঁ।
বামপন্থীদের দুর্দান্ত সাফল্যের প্রধান কান্ডারি জঁ লুক মেলেশঁ। তাঁর জোট নিউ পপুলার ফ্রন্টের প্রধান শরিক হল তাঁর দল ‘লা ফ্রান্স ইন্সোমিসে’ (এলএফআই)। এ ছাড়াও সেই জোটে রয়েছে সোস্যালিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিএফ), ট্রটস্কিপন্থী এবং ‘গ্রিনস্’। নির্বাচনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করতে এতটুকু সময় নষ্ট করেননি জঁ লুক মেলেশঁ। স্তালিনগ্রাদ স্কোয়ারে এক বিজয় সমাবেশে তিনি বলেছেন, “প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই দেশ শাসন করার জন্য নিউ পপুলার ফ্রন্টকে ডাকতে হবে।”
রবিবার ৩০ জুন যে প্রথম দফার ভোট হয় তাতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল অতি দক্ষিণপন্থীরাই। ফরাসি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের তথ্য থেকে জানা যায়, অতি দক্ষিণপন্থী জোট ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) পেয়েছিল ৩৩.২% ভোট। বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছিল ২৮% ভোট আর মাকরেঁর এনসেম্বল্ শিবির ছিল তৃতীয় স্থানে – পেয়েছিল ২০% ভোট। আর অন্যদের মধ্যে রক্ষণশীলদের ‘লে রিপুব্লিকাঁ’ পেয়েছিল ৬.৬% ভোট।
দ্বিতীয় রাউন্ডের ফল সবাইকে চমকে দিল। ভোট বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন দক্ষিণপন্থীদের ন্যাশনাল র্যালি আরও শক্তিশালী হয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। তা হল না। জঁ লুক মেলেশঁর নেতৃত্বাধীন বামপন্থীরা দ্বিতীয় স্থানে থেকে উঠে এল প্রথম স্থানে। আর অপ্রত্যাশিত ভাবে মাকরেঁর এনসেম্বল্ চলে এল দ্বিতীয় স্থানে। আর মারিন ল্য পেঁর নেতৃত্বাধীন অতি দক্ষিণপন্থীরা চলে গেল তৃতীয় স্থানে। অতি দক্ষিণপন্থীরা এতটাই নিশ্চিত ছিল যে, তারা তাদের আর-এক নেতা জর্দাঁ বারদেল্লাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে রেখেছিল।
আরও পড়ুন
হার মেনে নিলেন ঋষি শুনক, ব্রিটেনে বিপুল জয়ের পথে লেবার পার্টি
ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়লেন শুনক; ‘প্রথমে দেশের সেবা, পরে পার্টির’, বললেন নতুন প্রধানমন্ত্রী স্টারমের