মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তরফে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Student and Exchange Visitor Program (SEVP) সার্টিফিকেশন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিদেশি পড়ুয়ারা আর হাভার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না।
হাভার্ডের সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৮০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে ৭৮৮ জন ভারতীয় পড়ুয়া হাভার্ডে অধ্যয়নরত। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যার ২৭ শতাংশই আন্তর্জাতিক পড়ুয়া, যাঁদের বেশিরভাগই স্নাতকোত্তর স্তরের।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাঁরা ইতিমধ্যেই হাভার্ডে পড়ছেন, তাঁদের হয় অন্য কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে, নয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা হারাতে হবে।
তবে যারা ২০২৫ সালে স্নাতক হতে চলেছেন, তাঁদের ডিগ্রি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে।
নতুন ভর্তি ছাত্রদের কী হবে?
যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎ সেমেস্টারে হাভার্ডে ভর্তি হতে চলেছিলেন, তাঁদের এই মুহূর্তে সেখানে পড়াশোনার অনুমতি নেই। হাভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সরকার নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
সেই শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে—বিদেশি ছাত্রদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অডিও-ভিডিও রেকর্ড জমা দেওয়া এবং ক্যাম্পাসে হওয়া বিক্ষোভের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রকে তুলে দেওয়া। হাভার্ড এই তথ্য দিতে অস্বীকার করেছিল বলেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাভার্ড বনাম ট্রাম্প প্রশাসন
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে সেক্রেটারি নোম অভিযোগ করেন, হাভার্ড “হিংসা, ইহুদিবিরোধিতা এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগসাজশ” বাড়াচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত হাভার্ড এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান বিবাদেরই অংশ। এপ্রিল মাসে এই সংঘাত শুরু হয়, যখন হাভার্ড সরকারকে স্পষ্ট জানায় যে, তারা প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ রুখবে না এবং বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নীতি থেকে সরে আসবে না। এরপর থেকেই শিক্ষা ও গবেষণার বিভিন্ন সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
এই ঘটনার পর হাভার্ড আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
ছাত্রদের ভবিষ্যত কী?
বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা এই মুহূর্তে আইনি ও একাডেমিক পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ কেউ বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে আশা করছেন, সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্তের উপর হস্তক্ষেপ করবে।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা, যাঁদের সংখ্যা হাভার্ডে প্রায় ৭৮৮।