ওয়াশিংটন: গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে প্যালেসস্টাইনদের সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, গাজাকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর জন্য মার্কিন ‘মালিকানা’ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তাঁর এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান অস্ত্রবিরতির ভবিষ্যৎ এই বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
রিভিয়েরা: বিলাসবহুল উপকূলীয় শহরের প্রতীক
‘রিভিয়েরা’ শব্দটি মূলত ফ্রান্স এবং ইতালির উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা (Côte d’Azur), যা বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই অঞ্চলটি নীল সমুদ্র, অত্যাধুনিক স্থাপত্য, উচ্চমানের রিসর্ট, ক্যাসিনো, ইয়ট ক্লাব এবং অভিজাত জীবনযাপনের জন্য বিখ্যাত।
এছাড়া ইটালিয়ান রিভিয়েরা ও আমেরিকান রিভিয়েরা নামে পরিচিত কিছু উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিলাসবহুল হোটেল, ক্যাসিনো, এবং পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে।
ট্রাম্পের “গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা বানানোর” পরিকল্পনা মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিকে একটি উন্নত, আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ইঙ্গিত দেয়। তবে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে প্যালেস্টানি জনগণের ইচ্ছা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে।
"The U.S. will take over the Gaza Strip, and we will do a job with it, too." –President Donald J. Trump pic.twitter.com/aCqLl9Gwwn
— President Donald J. Trump (@POTUS) February 5, 2025
গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত
ট্রাম্পের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার ভূখণ্ডের পুনর্গঠনে পূর্ণ সহযোগিতা করবে, যা ভবিষ্যতে একটি উন্নত শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি বলেছেন, “আমরা চাই, মানুষ সেখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক, যেখানে তারা গুলিতে মারা যাবে না।”
তবে তাঁর এই প্রস্তাবে মিশর, জর্ডান এবং অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি কঠোর আপত্তি জানিয়েছে। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা থেকে প্যালেসস্টাইনদের স্থানান্তরিত করা হলে গোটা অঞ্চলের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।
গাজা থেকে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ সরানোর পরিকল্পনা?
ট্রাম্পের এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য ১৮ লক্ষ প্যালেসস্টাইনকে তাঁদের মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা। তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
তাঁর প্রশাসন ইতিমধ্যে মিশর, জর্ডান এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে কোনো দেশই এখনো ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়নি।
ওয়াশিংটনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর উপস্থিতির সময় ওয়াশিংটনের রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যায়। ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীরা ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ এবং ‘স্টপ হোস্টিং অ্যা ওয়ার ক্রিমিনাল’ বলে স্লোগান দেন। তাঁরা নেতানিয়াহুকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করেন এবং প্ল্যাকার্ডে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ জেনোসাইড (গণহত্যার প্রধানমন্ত্রী)’ লেখা ছিল।
🚨#BREAKING: Hundreds of pro-Palestine protesters are chanting Gaza is not for sale while waving keffiyehs and Hamas flags as President Trump meets with Netanyahu
— R A W S A L E R T S (@rawsalerts) February 5, 2025
📌#Washington | #DC
Currently taking place in Washington, D.C., a massive protest is underway as hundreds of… pic.twitter.com/24NWHn3azk
গাজা সংকট ও চলমান অস্ত্রবিরতি
গত ১৫ মাস ধরে গাজায় চলা সংঘাতে ৪৭,৫০০-এর বেশি প্যালেসস্টানি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি। অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং গাজার অস্ত্রবিরতির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।