ওয়াশিংটন ডিসি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার ঘোষণা করেছেন যে সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫% শুল্ক বসানো হবে। এর পাশাপাশি, চলতি সপ্তাহেই আরও কিছু ধাতব পণ্যের শুল্ক আরোপ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক নীতি
এয়ার ফোর্স ওয়ানে এনএফএল সুপার বোলে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্কের (Reciprocal Tariffs) ঘোষণা আসতে পারে, যা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে। যদিও এই শুল্ক কাদের ওপর আরোপ হবে তা স্পষ্ট করেননি, তবে তিনি জানান যে, যে দেশ আমেরিকার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে, তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “যদি কেউ আমাদের ওপর শুল্ক বসায়, তাহলে আমরাও তাদের ওপর বসাব।”
আগের শুল্ক নীতি ও পরিবর্তন
২০১৬-২০২০ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প স্টিলের ওপর ২৫% ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০% শুল্ক বসিয়েছিলেন। পরে কানাডা, মেক্সিকো ও ব্রাজিলের মতো কয়েকটি দেশের জন্য শুল্কমুক্ত কোটা চালু করা হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই কোটা ব্রিটেন, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যও বাড়িয়ে দেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন স্টিল শিল্পের উৎপাদন কমেছে বলে জানা গেছে।
কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ?
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কানাডা, ব্রাজিল ও মেক্সিকো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টিল সরবরাহকারী দেশ। অন্যদিকে, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়ামের ৭৯% সরবরাহ করে, আর মেক্সিকো সরবরাহ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্ক্র্যাপ ও অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয়। নতুন শুল্ক নীতি এই দেশগুলোর জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ বাড়ছে
ট্রাম্প বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান গাড়ির ওপর ১০% শুল্ক বসায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় গাড়ির ওপর মাত্র ২.৫% শুল্ক আরোপ করে। তিনি বলেন, “তারা আমাদের গাড়ি নিতে চায় না, অথচ লক্ষ লক্ষ গাড়ি আমেরিকায় রপ্তানি করে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কিছু উচ্চ শুল্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দেশটি পিকআপ ট্রাকের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করে, যা ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং স্টেলান্টিস-এর মতো ডেট্রয়েট ভিত্তিক অটোমেকারদের জন্য লাভজনক।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড-ওয়েটেড গড় শুল্ক হার ২.২%, যেখানে ভারতের ১২%, ব্রাজিলের ৬.৭%, ভিয়েতনামের ৫.১% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২.৭%।
ট্রাম্পের আসন্ন সাংবাদিক বৈঠক
মঙ্গলবার বা বুধবার ট্রাম্প এই নতুন শুল্ক নীতি সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য জানাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই ঘোষণা বিশ্ববাজারে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখনই জল্পনা শুরু হয়েছে।