খবর অনলাইন: কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের উপর গুলি। ২ জনের মৃত্যু। তার জেরে নানা জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল। ডালাসে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি। হত ৪ পুলিশ অফিসার, আহত সাত। সব কিছু মিলে গোটা আমেরিকা উত্তাল।
ডালাসের পুলিশ প্রধান ডেভিড ব্রাউন জানান, মোট ১১ জন পুলিশ অফিসারের গায়ে গুলি লাগে। এঁদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন, ৩ জন শহরের পুলিশবাহিনীর অফিসার, এক জন ডালাস এরিয়া র্যাপিড ট্রানজিট অফিসার। এক জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার পুলিশের গুলিতে মিনেসোটায় মৃত্যু হয় ফিল্যান্ডো ক্যাস্টাইলের আর লুইজিয়ানায় আল্টন স্টার্লিং-এর। ক্যাস্টাইল তাঁর ফিয়াসেঁ ও চার বছরের মেয়েকে গাড়ির পিছনের সিটে বসিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁর পথ আটকায়, বলে গাড়ির টেললাইট ভাঙা। তিনি অফিসারকে জানান, তাঁর আগ্নেয়াস্ত্র আছে। যখন ক্যাস্টাইল তাঁর ওয়ালেটের খোঁজে পকেটে হাত দেন, তখনই অফিসার তাঁকে গুলি করেন। এই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ফিয়াঁসে ডায়মন্ড রেনোল্ডস।
আর আল্টন স্টার্লিং মারা যান মঙ্গলবার। ঘটনা নিয়ে যাঁরা তদন্ত করছেন তাঁদের সূত্রে জানা গেছে, স্টার্লিং লুইজিয়ানার ব্যাটন রুশের এক ফুড মার্টে সিডি আর ডিভিডি বিক্রি করতেন। তাঁকে সবাই ‘সিডি ম্যান’ বলত। ঘটনার সূত্রপাত স্টার্লিং-এর কাছে এক আশ্রয়হীন মানুষের টাকা চাওয়া নিয়ে। অনেক জোরাজুরি করাতে বিরক্ত স্টার্লিং তাঁর বন্দুকটি দেখান। তখন সেই আশ্রয়হীন মানুষটি ৯১১-য় ফোন করে পুলিশ ডাকে। পুলিশ সেই স্টোরে এসে স্টার্লিংকে নীচে নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে বচসা বাধে। তাঁর মধ্যেই পুলিশটি স্টার্লিংকে বেশ কয়েক বার গুলি করে।
এই দুই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভে উত্তাল জয়ে ওঠে আমেরিকা। মিনেসোটার সেন্ট পলে গভর্নরের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়, লুইজিয়ানার ব্যাটন রুশে মিছিল বের করে, শিকাগোর ড্যান রিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে। নিউ ইয়র্কের ফিফথ্ অ্যাভেনিউ দিয়ে হাজার খানেক মানুষ মিছিল করে। পুলিশের সঙ্গে তাদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের নিগ্রহের প্রতিবাদ জানায় তারা।
আমেরিকার ছোট বড় সব শহরে কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার বিপদ যে কত, তা মিনেসোটায় এক আবেগমথিত ভাষণে বুঝিয়ে দেন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা লারোন্ডা ট্যালি। ফিল্যান্ডো ক্যাস্টাইলের মা ভ্যালেরি বলেন, “আজ আমার ছেলে মারা গেছে। কাল হয়তো আপনার ছেলে যাবে। এ সব এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া দরকার। পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাউকে দরকার।”
বিখ্যাত মার্কিন পপ স্টার বেয়ন্সে তাঁর ওয়েবসাইটে বার্তা দিয়ে বলেছেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীদের হত্যার ঘটনায় আমরা পীড়িত, ক্লান্ত। এ বার আমাদের একটা পদক্ষেপ করতে হবে এবং দাবি করতে হবে ‘আমাদের হত্যা করা বন্ধ করো’। আমরা সহানুভূতি চাই না। আমরা চাই প্রত্যকে আমাদের জীবনকে শ্রদ্ধা করুক।”
মিনেসোটা ও লুইজিয়ানার ঘটনা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “এটা শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপার নয়, গোটা আমেরিকার ব্যাপার।” ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়ারশ’য় পৌঁছেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবামা। তিনি বলেন, “পুলিশের নৃশংসতায় আমেরিকাবাসীর ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ জাতিবৈষম্যের এই আঁচ দীর্ঘদিন ধরেই ধিকি ধিকি জ্বলছে। এর মধ্যেই আমেরিকাবাসীর শিকড় প্রোথিত।”
সৌজন্যে সিএনএন
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।