মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার পর অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এক নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র স্ট্যাগফ্লেশন পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে, যা সাধারণ মন্দার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর।
স্ট্যাগফ্লেশন বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক স্থবিরতা (stagnation) এবং মুদ্রাস্ফীতির (inflation) সম্মিলিত পরিস্থিতি। যেখানে একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যায় এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র শেষবার এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
ট্যারিফ নীতির প্রভাব ও বাজারের অস্থিরতা
সিএনবিসি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে একদিকে বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধস নামে। ডাও জোন্স ১.৫ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ১.২ শতাংশ, এবং ন্যাসডাক ০.৩ শতাংশ কমে যায়।
মার্ক মুডিজ অ্যানালিটিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি জানান, “বর্তমান পরিস্থিতি স্ট্যাগফ্লেশনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ট্যারিফ ও অভিবাসন নীতির প্রত্যক্ষ ফলাফল।”
অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণ
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন অর্থনীতিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের চেয়ে বেশি। এদিকে গ্রাহক ব্যয় গত চার বছরে সর্বোচ্চ হারে কমেছে, যা অর্থনৈতিক মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শিল্প খাতেও ধীরগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কারখানার উৎপাদন প্রবৃদ্ধি প্রায় শূন্যের কোঠায়, এবং নতুন অর্ডারের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই অবস্থায় আটলান্টা ফেডারেল রিজার্ভ পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে মার্কিন জিডিপি ২.৮ শতাংশ কমতে পারে। যদি এটি সত্যি হয়, তবে এটি হবে ২০২২ সালের পর প্রথমবার অর্থনৈতিক সংকোচন এবং ২০২০ সালের কোভিড-১৯ লকডাউনের পর সবচেয়ে বড় পতন।
ফেডের নীতি ও বাজারের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ জুন মাস থেকে সুদের হার কমাতে পারে, তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে ফেড সুদের হার আরও বাড়ানোর কথাও ভাবতে পারে।
ন্যাশনওয়াইড ইনভেস্টমেন্টের চিফ মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট মার্ক হ্যাকেট বলেন, “এই মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে স্ট্যাগফ্লেশন নিয়ে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, শুল্কনীতি জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধি করবে এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উত্সাহিত করবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নীতিগুলো মার্কিন অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।