ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিল। সোমবার গভীর রাতে হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে যে, কানাডা ও মেক্সিকোর উপর পরিকল্পিত শুল্ক আরোপ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। দুই দেশের সঙ্গে নতুন নিরাপত্তা চুক্তির পর, যেখানে সীমান্ত সুরক্ষা ও ফেন্টানিল মাদকের প্রবাহ বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কানাডার সঙ্গে নতুন চুক্তি
ট্রাম্প একটি পোস্টে লিখেছেন, “এই প্রাথমিক ফলাফলে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। শনিবার ঘোষিত শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে, যাতে কানাডার সঙ্গে একটি চূড়ান্ত অর্থনৈতিক চুক্তি করা যায়। সবার জন্য ন্যায়বিচার!”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিশ্চিত করেছেন যে, দেশটি ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের একটি সীমান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এই পরিকল্পনা নতুন চপার, উন্নত প্রযুক্তি ও অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী সংযোজনের মাধ্যমে মার্কিন সীমান্তকে আরও সুরক্ষিত করবে।
ট্রুডো এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো আলোচনা করেছি। কানাডা ইতিমধ্যেই ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সীমান্ত পরিকল্পনা কার্যকর করছে, যাতে ফেন্টানিল আসা বন্ধ করা যায় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার হয়।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন—
ফেন্টানিল দমন করতে একজন বিশেষ কর্মী’ নিয়োগ করা হবে।
মেক্সিকান কার্টেলগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ স্ট্রাইক ফোর্স গঠন করা হবে, যা মাদক পাচার ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।
এছাড়া, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কানাডা অতিরিক্ত ২০কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
মেক্সিকোও নিয়েছে কড়া পদক্ষেপ
মেক্সিকোর সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম-এর সঙ্গে আলোচনার পর, ট্রাম্প মেক্সিকোর উপর শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
এই চুক্তির আওতায়—
মেক্সিকো ১০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করবে মার্কিন সীমান্তে, যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উভয় দেশের প্রশাসনিক কর্তারা একত্রে সীমান্ত নিরাপত্তা ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধের বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন।
চিনের উপর চাপ অব্যাহত
যদিও কানাডা ও মেক্সিকোর উপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, চিনের উপর মার্কিন শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে চিনের উপর ১০% শুল্ক কার্যকর হবে, এবং ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, এই শুল্ক আরও বাড়ানো হতে পারে।
তিনি বলেন, “যদি আমরা চিনের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তি করতে না পারি, তাহলে শুল্কের হার আরও বেশি হবে।”
এই পরিস্থিতিতে আগামী কয়েকদিন গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, কারণ ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ ও সীমান্ত সুরক্ষা নীতির অংশ। তবে, আগামী ৩০ দিনে কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হয়, তার উপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত চুক্তি।