মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এক ধাক্কায় যুদ্ধে রূপ নিল। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আমেরিকার বিমান হামলার পর এবার হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিল তেহরান। এই ঘটনার জেরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে ভারতের উপর।
জানা গিয়েছে, ফোর্দো, নাটান্জ ও এসফাহান— ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে আমেরিকান যুদ্ধবিমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে “একটি চমৎকার সামরিক সাফল্য” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে।
এর পরই ইরানের আইআরজিসি নেভির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলিরেজা তাংসিরি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “হরমুজ প্রণালী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল-পরিবহণ পথ হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রফতানি হয়— যা বিশ্বজুড়ে দৈনিক ব্যবহৃত তেলের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। প্রণালীটি বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত ও ইউএই-এর তেল রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ইতিমধ্যেই ৯০ ডলার পেরিয়েছে, ডব্লিউটিআই পৌঁছেছে ৮৭ ডলারে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, prolonged সংকট তৈরি হলে তেলের দাম ১২০–১৫০ ডলারে পৌঁছতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে গভীর সঙ্কটে ফেলবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতও চরমভাবে প্রভাবিত হবে। কারণ, ভারতের প্রায় ৯০% অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল এবং তার মধ্যে ৪০%-এর বেশি তেল হরমুজ প্রণালী পেরিয়ে আসে। এই পথে কোনো বিঘ্ন ঘটলে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলির কাজ ব্যাহত হবে, বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি, চাপ পড়বে বাণিজ্য ঘাটতিতে এবং টাকার মূল্য পড়ে যেতে পারে।
সরকারের ৭৪ দিনের তেল-মজুত থাকলেও সেটা দীর্ঘমেয়াদে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্তরে জরুরি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
বিশ্বের আর্থিক বাজার ইতিমধ্যেই চরম অনিশ্চয়তার মুখে। জ্বালানি ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বাড়বে, জাহাজ চলাচল ব্যাহত হবে, বিমা সংস্থাগুলি যুদ্ধজনিত ঝুঁকি প্রিমিয়াম বাড়াবে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধি ১-২% কমে যেতে পারে এবং বিশ্বমন্দার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।