দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। দামাস্কাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশ ছাড়েন তিনি। এমনটাই জানিয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত বিদ্রোহীরা রবিবার দামাস্কাস দখলের দাবি করেছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রবিবার শহরে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। অন্যদিকে, আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা শহরের চারপাশের অবস্থান ছেড়ে সরে গিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্রোহীদের উত্থান
বিদ্রোহীদের এই আস্ফালন গত ২৭ নভেম্বর শুরু হয়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই তারা হোমসসহ (দামাস্কাস থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত) বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করেছে। শনিবার বিদ্রোহীরা “সেডনায়া কারাগারের যুগের অবসান” ঘোষণা করে, যা দীর্ঘদিন ধরে সিরীয় শাসনের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন নির্যাতনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনার পর পথে পথে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতেও দেখা গিয়েছে।
আসাদের দেশত্যাগ
সিরিয়ান অবজারভেটরির প্রধান রামি আবদেল রহমান জানিয়েছেন, দামাস্কাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশ ছাড়েন আসাদ। বিদ্রোহীরা শহরে প্রবেশ করার আগেই তিনি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে এখনও স্বাধীন ভাবে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। একটি সূত্রে দাবি, প্রেসিডেন্ট আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়েছেন।
হিজবুল্লার সেনা প্রত্যাহার
হিজবুল্লার সশস্ত্র বাহিনী তাদের অবস্থান ছেড়ে সিরিয়ার লাটাকিয়া ও লেবাননের হারমেল এলাকায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে আসাদের প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাও তাদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দামাস্কাসে আতঙ্ক
দামাস্কাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের কেন্দ্রে যানজট তৈরি হয়েছে। মানুষ তাড়াহুড়ো করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলছেন এবং খাবার মজুত করছেন। রানিয়া নামের এক বাসিন্দা সংবাদ সংস্থার কাছে জানিয়েছেন, “সকালে যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল না। হঠাৎ সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ল।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইরান, রাশিয়া এবং তুরস্কের বিদেশমন্ত্রীরা কাতারে বৈঠক করে সিরিয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক পারস্পরিক আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, “কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীকে সিরিয়ার ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেওয়া যায় না।”
মানবিক সংকট
রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৮২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১১১ জন সাধারণ নাগরিক। প্রায় ৩,৭০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সিরিয়ার এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি একটি মানবিক সংকট তৈরি করেছে। বিদ্রোহী এবং সরকার উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় ‘বিদ্রোহীদের দখলে’ রাজধানী, প্রেসিডেন্ট আসাদের আত্মগোপন, সুর নরম প্রধানমন্ত্রীর