নীলাদ্রি পাল
শুক্রবার, ১ জুলাই। ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা। বড়িশা অঞ্চলে ডায়মন্ডহারবার রোডের পূর্বে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বড়বাড়ির সামনে রথগৃহ থেকে রথের দড়িতে পড়ল টান। সূচনা হল ৩০৪তম বর্ষের কলকাতার প্রাচীনতম রথযাত্রা ‘বড়িশা সার্বজনীন রথযাত্রা’ উৎসবের।
এর আগে ডায়মন্ডহারবার রোডের পূর্বে সখেরবাজার মোড়ের জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে নিয়ে এসে রথে বসানো হয়। সমস্ত নিয়মরীতি মানার পর বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে রথ চলতে শুরু করে। বেহালা চৌরাস্তা পর্যন্ত গিয়ে আবার দক্ষিণ দিকে এসে শীলপাড়া ভজন আশ্রমের সামনে বোসপাড়ায় স্বর্গীয় হীরালাল বসুর বাড়িতে এসে এই রথযাত্রা শেষ হয়। উল্টোরথের দিন পর্যন্ত জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ এই বাড়িতেই অবস্থান করে।

সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের কৃষ্ণদেব রায় চৌধুরী ১৭১৯ সালে এই রথযাত্রা উৎসবের প্রচলন করেন। ন’টি চূড়াবিশিষ্ট রথে সেই সময় শালগ্রামশিলা নিয়ে যাওয়া হত এই পরিবারেরই বেনাকি বাড়িতে। সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা বহনকারী এই উৎসব ১৯৭৫ সালে এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। সেই বছর ডায়মন্ডহারবার রোড সম্প্রসারণের জন্য রথগৃহ ভাঙা পড়ে। খোলা আকাশের নীচে থাকার কারণে কাঠের তৈরি রথটি রোদ, জল, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তার ধারে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার জন্য মূল্যবান পিতলের কারুকাজগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে ১৯৭৮ সালে রথযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়।
বেশ কিছু বছর বাদে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের উত্তরসূরি গোরাচাঁদ রায় চৌধুরী এই রথযাত্রাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। গড়ে ওঠে বড়িশা সার্বজনীন রথযাত্রা কমিটি। চাঁদা তুলে এই কমিটিই পুরী থেকে কারিগর আনিয়ে মাত্র দু’ সপ্তাহে কাঠের এই বর্তমান রথটি তৈরি করেন। পুরীর রথের ছোটো সংস্করণের রূপ দেওয়া হয় এই রথটিতে। পুরোনো রথের কাঠামো এবং লোহার চাকাগুলো অপরিবর্তিতই থাকে।

রথগৃহ তৈরি করে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ভৈরব দত্ত পাণ্ডের কাছে আবেদন করা হলে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত বিভাগ সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বড়বাড়ির দান করা জমিতে রথগৃহ বানিয়ে দেয়। পরবর্তী কালে ওই রথগৃহকে সংস্কার করে মন্দিরের রূপ দেওয়া হয়।
সখেরবাজার মোড়ে ডায়মন্ডহারবার রোডের পূর্ব দিকে জগন্নাথদেবের মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯১১ সালে। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের লালকুমার রায় চৌধুরী এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে এই রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন হয়।
ছবি: প্রতিবেদক
আরও পড়তে পারেন