আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়েছে গোটা রাজ্য। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআইকে এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশ পাওয়ার পরপরই, দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের একটি বিশেষ দল কলকাতায় আসছে। সিবিআইয়ের এই দল বুধবার সকালে কলকাতায় পৌঁছাবে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। তারা তদন্তের নথিপত্র সংগ্রহ করে, বুধবারই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যেতে পারেন।
বুধবার চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে চিকিৎসক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস বুধবারের জন্য রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অ-জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে। চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরজি করের বক্ষরোগ বিভাগের সংস্কারের নামে প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা করছেন তাঁরা, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, মঙ্গলবার বিকেলে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের বক্ষরোগ বিভাগে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। যে স্থানে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেই সেমিনার হলের উল্টো দিকের ঘরটিতে সংস্কার কাজ করা হয়। এই ঘটনা চিকিৎসক মহলে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে, এবং তারই প্রতিবাদে এই কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুন্যব্রত গুন জানিয়েছেন, “হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অপরাধী ধরা না পড়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
প্রতিবাদ মঞ্চে অপর্ণা সেন
শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চের পক্ষ থেকে মঙ্গলবারের ‘নাগরিক সমাজের ধিক্কার পদযাত্রা’র আহ্বান জানানো হয়েছিল। শ্যামবাজার নেতাজি মূর্তির সামনে থেকে বিকেল চারটে নাগাদ পদযাত্রা শুরু হয়। শেষ হয় আর জি করের জরুরি বিভাগের গেটে। মীরাতুন নাহার, সুজাত ভদ্র, সোহিনী সেনগুপ্ত, পল্লব কীর্তনীয়া, উদয় নারায়ণ সরকারদের সঙ্গে এই পদযাত্রায় অপর্ণা সেনেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার হাঁটতে পারেননি।
গাড়িতে করে তিনি সোজা আর জি কর হাসপাতালে পৌঁছান। এদিকে তাঁকে দেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েকজন সিপিএম সমর্থক। কিন্তু তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই সোজা বিক্ষোভকারীদের মাঝে চলে যান অপর্ণা সেন। সেখানে কিছুক্ষণ বসেন তিনি।
মাইক হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কতগুলি প্রশ্ন আছে। এই সিভিক ভলান্টিয়াররা কারা? তাঁদের কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে?… এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ঢোকা বন্ধ করা হোক। পুলিশের জবাবদিহি করার প্রয়োজন আছে। কেন পুলিশ মৃতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেও এটাকে একটা আত্মহত্যার ঘটনা বলে ঘোষণা করল? কেন পুলিশ তড়িঘড়ি এত ব্যস্ত হয়ে উঠল ময়নাতদন্ত করার জন্য? কেন এই হাসপাতালে যেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে সেখানেই কেন ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে বলা হল? এই সব প্রশ্ন আমাদের সকলের মনে উঠেছে এবং এই সব প্রশ্নের জবাব আমরা চাই। এই জবাব পাওয়ার অধিকার আমাদের আছে। আমাদের দাবি যে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এখানে তদন্ত হোক… ছাত্রছাত্রীদের বলছি, “আমার কণ্ঠ তোমাদের কণ্ঠের সঙ্গে মেলালাম।”
মধ্যরাতে রাস্তা দখলের আহ্বান
মধ্যরাতে রাস্তা দখলের আহ্বান সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যে। এই আন্দোলন কলকাতার তিনি জায়গায় সীমিত ছিল, কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় তা রাজ্য জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
দলহীন এবং পতাকাহীন এই আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন অনেক তৃণমূল নেতার পরিবারের মহিলা, আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠেরাও।
কলকাতা পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোমা চৌধুরী ফেসবুকে অন্তত ১৪টি জায়গার জমায়েতের পোস্টার পোস্ট করে লিখেছেন, ‘নারীদের সম্মান, প্রাণ বাঁচাতে দলবদ্ধ হোন।’
কলকাতা পুরসভার একাধিক কাউন্সিলারের পরিবারের মহিলারা মিছিলে পা মিলেয়েছেন। মঙ্গলবারের নাগরিক মিছিলে হাঁটেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়, পিয়া চক্রবর্তী (ঘটনাচক্রে, যিনি অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী), মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।
আরও পড়ুন
আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ, হাই কোর্টের নজরে রাজ্যের তথ্যপ্রমাণ