কলকাতার তারাতলায় অবস্থিত ব্রিটানিয়া কারখানার দরজা আজীবনের মতো বন্ধ হয়ে গেল সোমবার। এ ঘটনার ফলে চাকরি হারালেন শতাধিক স্থায়ী কর্মী এবং ২৫০ জন অস্থায়ী কর্মী। শতবর্ষেরও বেশি পুরনো এই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া শুধু কর্মীদের জন্যই নয়, বাঙালির আবেগের উপরেও একটি বড় আঘাত।
বিখ্যাত বিজ্ঞাপন ‘দাদু খায়, নাতি খায়’-এর মাধ্যমে ব্রিটানিয়া বহুদিন ধরে বাঙালির ঘরের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আজ তা স্মৃতি হিসাবেই থেকে গেল। সংস্থার পক্ষ থেকে কারখানার স্থায়ী কর্মীদের এককালীন ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে, তবে অস্থায়ী কর্মীরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ।
তারাতলার ব্রিটানিয়া কারখানাটি বছরে গড়ে ২৫০০ টনেরও বেশি বিস্কুট এবং অন্যান্য স্ন্যাকস উৎপাদন করত। গত দুই মাস ধরে কারখানার উৎপাদন কার্যত বন্ধের মুখে ছিল। এই পরিস্থিতির কারণে কর্মীরা অশনি সংকেত পেয়েছিলেন, তবে কেউ ভাবতে পারেননি এত দ্রুত কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সোমবার সকালে অন্যান্য দিনের মতোই নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় পৌঁছে গেটে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেখে কর্মীরা হতবাক হয়ে যান।
কলকাতার একমাত্র ব্রিটানিয়া কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে কী কারণ তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও মুখ খোলেনি। ব্যবসায়িক মন্দা নাকি শ্রমিক সমস্যা, কোন কারণেই কারখানা বন্ধ হল তা স্পষ্ট নয়। শ্রমিকদের একাংশের মতে, ব্যবসায়িক দিক থেকে ব্রিটানিয়া এখনও বাংলার বাজারে অন্য যে কোনও সংস্থার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।
কারখানার সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কর্মীদের ১৮ থেকে ২২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক কানাকড়িও পাননি অস্থায়ী কর্মীরা। এই বৈষম্যের কারণে অস্থায়ী কর্মীরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাদের দাবি, ক্ষতিপূরণের যথাযথ ব্যবস্থা না করা হলে তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
ব্রিটানিয়ার তারাতলা কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বাংলার শিল্পমহলে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে। কর্মহীন শতাধিক স্থায়ী ও ২৫০ জন অস্থায়ী কর্মীর জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে, যার ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে বাংলার কর্মসংস্থান ও শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে।