অদূর ভবিষ্যতে আবারও কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চলেছে ধর্মতলা। জোকা-ধর্মতলা, দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর – এই তিনটি মেট্রো পথের সংযোগস্থল হতে চলেছে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে এক বিশাল বিপ্লব আনতে চলেছে এই সংযুক্তি। আর সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার ধর্মতলা চত্বরকে সম্পূর্ণ নতুন রূপে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে।
এই বৃহৎ প্রকল্পের অন্তর্গত রয়েছে ধর্মতলা থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাস স্ট্যান্ড অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত। সেই জায়গাতেই মাটির নিচে তৈরি হবে একটি আধুনিক ভূগর্ভস্থ পার্কিং প্লাজা, যেখানে প্রায় ৯০০ গাড়ি রাখা যাবে। যান চলাচল যাতে সাবলীল থাকে এবং যাত্রীরা সহজে মেট্রো স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন, তার জন্য থাকছে তিনটি প্রবেশ ও বাহিরপথ যুক্ত সুরঙ্গ এবং চারটি সাবওয়ে।
বুধবার কলকাতা পুরসভায় একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং সেনা আধিকারিকেরা। উপস্থিত ছিল সমীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাইটস, যারা একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের ডিপিআর (ডিটেল্ড প্রজেক্ট রিপোর্ট) তুলে ধরেছে।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “ভবিষ্যতে ধর্মতলায় মানুষের যাতায়াত অনেকটাই বাড়বে। সেই চাপ সামলাতে চাইলে আধুনিক পরিকাঠামোর প্রয়োজন ছিল। এখানে কোনও বাস স্ট্যান্ড আর থাকবে না। তিনটি নির্দিষ্ট স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র বাস থেমে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাবে। যাঁরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসেন, তাঁরা গাড়ি পার্ক করে মেট্রোতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।”
এছাড়াও, রাস্তার উপর যাতে গাড়ি না দাঁড়ায় এবং ট্র্যাফিক সচল থাকে, তার জন্য সব গাড়ি পার্কিং লটে রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাস্তার উপর গাড়ি না থাকলে পথ হবে আরও প্রশস্ত এবং যান চলাচলও হবে গতিশীল। সব মিলিয়ে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ধর্মতলার পরিবহণ চিত্র এক ঐতিহাসিক রূপ নিতে চলেছে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। আগামী দিনে ধর্মতলা শুধু শহরের নয়, গোটা পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেই আশা প্রশাসনের।