খবর অনলাইন ডেস্ক: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রবিকিষন কপূরের নির্দেশ পেতেই কলকাতা মহানগরী মঙ্গলবার পালন করল দ্রোহের কার্নিভাল। রানি রাসমণি রোডে আয়োজিত ওই কার্নিভালে হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেন। তাঁদের হাতে ছিল নানা পোস্টার, মুখে ছিল নানা স্লোগান এবং শিকল ভাঙার গান। বেজেছে ঢাকের বাদ্যিও।
হাইকোর্টের নির্দেশের খবর মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন-মঞ্চে। সাজো সাজো রব পড়ে যায় অনশন-মঞ্চকে ঘিরে। রানি রাসমণি রোড ব্যারিকেড করে রেখেছিল পুলিশ। উদ্বেলিত জনতা সেই ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়েই ঢুকে যান রানি রাসমণি রোডে। শেষ পর্যন্ত পুলিশই ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলে। ব্যারিকেড সরাতেই জনস্রোত ধেয়ে যায় রানি রাসমণি রোডে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই গোটা এলাকা মানুষে মানুষে ছয়লাপ হয়ে যায়।
এদিন দ্রোহের কার্নিভালের যোগ দেন বিভিন্ন সংগঠন। ছবি: রাজীব বসু।
সোমবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়ে দিয়েছিলেন দ্রোহের কার্নিভালে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তার পর রাতেই রানি রাসমণি রোড, ডোরিনা ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা) জারি করে। যার অর্থ ওই এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক মানুষের জমায়েত করা যাবে না। দ্রোহের কার্নিভাল থেকে অশান্তি হতে পারে, এই আশঙ্কায় ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়।
পুলিশের নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার হাইকোর্টে যায় জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে তাঁরা দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। সেই আর্জি মঞ্জুর হয়। দুপুর দুটোর কিছু পরেই হাইকোর্টে বসে বিচারপতি রবিকিষন কপূরের বিশেষ বেঞ্চ। এবং দু’ পক্ষের বক্তব্য শোনার পর দুপুর ২টো ৫৩ মিনিটে বিচারপতি কপূর দ্রোহের কার্নিভালের অনুমতি দেন এবং ১৬৩ ধারা খারিজ করে দেন।
কার্নিভালের পাশাপাশি মানববন্ধন। ছবি: রাজীব বসু।
বিকেলের দিকে একের পর এক মিছিল পৌঁছোতে থাকে রানি রাসমণি রোডে। মানুষ যেমন মিছিল করে এখানে আসেন তেমনই অসংখ্য অগণিত মানুষ আসেন নিজের উদ্যোগে, স্বেচ্ছায়। রানি রাসমণি রোড একেবারে ভরে যায়। জমায়েতে যোগদানকারী অনেকেরই হাতে ছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরার ছবি সংবলিত পোস্টার। তাতে লেখা ‘প্রীতিলতা-মাতঙ্গিনীদের বাংলায় ধর্ষকদের ঠাঁই নেই’। পুলিশের গাড়িতেও সেঁটে দেওয়া হয় সেই পোস্টার। হাইকোর্ট থেকে রানি রাসমণি রোডে চলে গিয়েছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। বহু মানুষের মধ্যে তাঁকে ঘিরেও উৎসাহ দেখা যায়।
ওদিকে রানি রাসমণি রোডে যখন দ্রোহের কার্নিভাল চলছে তখনই শুরু হয়ে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন। সন্ধের পর ভিড় আরও বাড়ে। ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা মোড় পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সন্ধের পরেও অনেকক্ষণ কার্নিভাল ও মানববন্ধন চলে। জমায়েতকারীরা এদিন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।