নিউ আলিপুরের এক নবদম্পতির ইউরোপে হানিমুন স্বপ্ন এক ধাক্কায় দুঃস্বপ্নে বদলে গেল। প্রায় ৭.৬ লক্ষ টাকা খোয়ালেন তাঁরা এক ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে।
দম্পতির অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার Survey Park–East Jadavpur এলাকায় অফিস থাকা একটি ট্রাভেল এজেন্সি ইউরোপ ট্যুরের নামে তাঁদের কাছ থেকে টানা জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে একাধিক ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৭.৬ লক্ষ টাকা নেয়। মে মাসের ১৪ তারিখ থেকে তাঁদের ইউরোপ ট্যুর শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের মাত্র তিন দিন আগে, এজেন্সির তরফে তাঁদের কাছে একটি মেসেজ আসে—ট্যুর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কোনও ব্যাখ্যা বা রিফান্ডের হদিশ মেলেনি।
দম্পতির কথায়, “আমাদের শুধু ডামি বুকিং দেখানো হয়েছিল, যেগুলোর কোনও ফ্লাইট বা হোটেল কনফার্মেশন ছিল না। ফলে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ট্র্যাভেল ভাউচারও জোগাড় করা যায়নি।” ওই ব্যক্তি একজন নতুন সংস্থার পার্টনার বলে জানিয়েছেন।
দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এজেন্সির দুই মালিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। জানা গেছে, অভিযুক্তরা রিফান্ড দেওয়ার অঙ্গীকারে জুন ২৭ তারিখে দুটি পোস্ট–ডেটেড চেক দিয়েছিল, যার প্রত্যেকটি ৩.৮ লক্ষ টাকার। তবে সেই চেক বাস্তবে ক্যাশ না হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল।
শহরে একের পর এক ট্রাভেল প্রতারণা
এই ঘটনা একা নয়। কয়েক দিন আগেই হুগলির চুঁচুড়ায় এক ট্রাভেল এজেন্টকে ৫.২ কোটি টাকার বিমান টিকিট প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার একবালপুর থানায় এক ব্যক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভুয়ো ট্যুর প্যাকেজ দেখিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশের পরামর্শ ও সতর্কতা
লালবাজারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “ভোটার, পাসপোর্ট বা প্যান কার্ডের মতো প্রমাণ না থাকলে যেকোনও ট্রাভেল এজেন্সি থেকে পুরো টাকা আগাম দেবেন না। বুকিংয়ের আগে সব তথ্য যাচাই করুন। হোটেল বা এয়ারলাইনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন। সব সময় নথিভুক্ত ও স্বীকৃত ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গেই লেনদেন করুন।”
পুলিশ ও সাইবার সেলের তরফে নাগরিকদের জন্য কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে:
- ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবেন না।
- ভুয়ো বা অস্পষ্ট নথিপত্র পেলে সতর্ক হোন।
- ট্যুরের আগে বিস্তারিত ইটিনারারি ও রসিদ সংগ্রহ করুন।
- যেকোনও সন্দেহজনক ট্রাভেল অফার বা এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিকটবর্তী থানায় জানান।
- উপভোক্তা সুরক্ষা দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করুন।
এক অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটর বলেন, “যদি কোনও অফার খুব বেশি ভালো লাগে বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি ফাঁদ।”
কলকাতা সহ আশেপাশের শহরে বেড়ে চলেছে এই ধরনের ট্রাভেল জালিয়াতির ঘটনা। সামান্য অসতর্কতাতেই বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ। তাই ট্রাভেল বুকিংয়ের আগে সাবধান হোন, যাচাই করুন এবং প্রমাণসহ লেনদেন করুন।