যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মৈনাক পাল (৪৪) অস্বাভাবিকভাবে মারা গিয়েছেন । উত্তরাখণ্ডের লালকুয়াঁ এলাকার একটি হোটেল থেকে শনিবার তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। হোটেল কর্মীরা দরজা ভেঙে শৌচালয়ে মৈনাকের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। গলা ও হাত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা ছিল, ঘরের মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে ছিল। প্রাথমিক তদন্তে একে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, তাঁর এই মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে এবং ঘটনাটি ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৈনাক দুই বন্ধুর সঙ্গে উত্তরাখণ্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন। তবে ফেরার সময় একাই ছিলেন এবং লালকুয়াঁর হোটেলে ওঠেন। শনিবার সন্ধ্যায় মৈনাকের পরিবারের তরফে তাঁর ফোন না তোলার বিষয়টি জানানো হলে, হোটেল কর্তৃপক্ষ দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে এবং দেহ উদ্ধার করে।
মৈনাক পাল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক এবং যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সরকারি কলেজে পড়ানোর পর তিনি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। পরে যাদবপুরে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। মৈনাকের সহকর্মীরা তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
যাদবপুরের জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “মৈনাক অত্যন্ত মেধাবী ও মিতভাষী ছিলেন। ছাত্রদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ক্ষতি।” প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, “উনি শুধু দর্শন নয়, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান রাখতেন। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন।” যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, “তাঁর গবেষণার দক্ষতা এবং শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠা সকলকে মুগ্ধ করত।”
মৈনাকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী ও কন্যা কলকাতায় রয়েছেন। তাঁর দেহ উত্তরাখণ্ড থেকে কলকাতায় আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর দেহ শহরে এসে পৌঁছানোর কথা।
পাহাড় ছিল মৈনাকের প্রিয় জায়গা। ছুটি পেলেই তিনি পাহাড়ে ছুটে যেতেন। সেই উত্তরাখণ্ডেই জীবনাবসান ঘটল তাঁর। সহকর্মী এবং শিক্ষকমহলে তাঁর এই অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।