কলকাতা: মঙ্গলবার দুপুরে সল্ট লেকের করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত মিছিল করে গেলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে ফিরে যাওয়ার যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট সোমবার দিয়েছিল তাতেও সাড়া দেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা।
আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাসাধিককাল ধরে কর্মবিরতি চালাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ওই ঘটনা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের যে পাঁচ দফা দাবি রয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি দাবি। সেই দাবিটি হল রাজ্যের তিন স্বাস্থ্যকর্তার ইস্তফা। ওই তিন স্বাস্থ্যকর্তা হলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)। এই দাবিগুলি নিয়েই মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারেরা স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেন।
করুণাময়ী থেকে শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। মিছিলকারীদের কারও কারও হাতে ছিল ঝাঁটা। তাঁদের দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে ‘সাফাই অভিযানে’ যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার কথাও তোলেন তাঁরা।
মিছিলকারীদের হাতে ছিল প্রতীকী ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: রাজীব বসু।
মিছিলকারীদের হাতে ছিল প্রতীকী ‘মস্তিষ্ক’। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি চললেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এদিকে তাঁদের আন্দোলন দমাতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের ‘মস্তিষ্ক উপহার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। উল্লেখ্য, এর আগে লালবাজার অভিযানে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে প্রতীকী ‘শিরদাঁড়া’ উপহার দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
ওদিকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ। ভবনের সবকটি প্রবেশদ্বারের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। স্বাস্থ্য ভবনের গেট বন্ধ থাকায় রাস্তাতেই বসে পড়েন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের দাবি, যতক্ষণ না তাঁদের দাবি মানা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
রাত সাড়ে ১১টার খবর, তখনও চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান। অনেকে গিটার বাজিয়ে গানও গাইছেন। জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার বাবা-মা রাতেই আসছেন সেখানে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। প্রয়োজনে সারারাত ধরে চলবে অবস্থান বিক্ষোভ।
যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা মাসাধিককাল আন্দোলন চালাচ্ছেন সেগুলি হল – এক, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে, অপরাধের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; দুই, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যারা জড়িয়ে রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে; তিন, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ইস্তফা দিতে হবে; চার, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং পাঁচ, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে।