কলকাতা: তিলোত্তমার জন্য বিচার চাওয়ার পাশাপাশি এবার ১৫১ বছরের পুরোনো ট্রামের জন্যও ‘বিচার’ চাইছে কলকাতা। ট্রামের জন্য ‘বিচার’-এর দাবিতে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে মহানগরী। এবং দিন দিন সেই দাবি জোরদার হচ্ছে। ময়দানে ‘জয়রাইড’ ছাড়া কলকাতায় ট্রাম চালানো বন্ধ করে দেওয়ার কথা গতমাসের শেষ দিকে রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই পথে নেমেছে শহরবাসী। শনিবার সন্ধ্যাতেও ট্রামের জন্য ‘বিচার’ চেয়ে এক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রায় শপাঁচেক মানুষ ওই মিছিলে শামিল হন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মিছিলে যোগ দেন।
এই মিছিলের আয়োজন করে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিটিইউএ)। মিছিল শুরু হয় কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে থেকে, শেষ হয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা প্ল্যাকার্ড ছিল মিছিলকারীদের হাতে। প্ল্যাকার্ডে লেখা – ‘তিলোত্তমা দিচ্ছে ডাক ট্রামও এবার বিচার পাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর ট্রামস’, ‘কলকাতা যতদিন ট্রাম চলবে ততদিন’, ‘শহরকে বাঁচাতে পরিবেশ বান্ধব, আধুনিক ও পর্যাপ্ত ট্রামের বিকল্প কি ছোটো প্রাইভেট গাড়ি!!’
ভারতে কলকাতাই একমাত্র শহর যেখানে আজও ট্রাম চলে। সবচেয়ে শেষে ট্রাম বন্ধ হয়েছে মুম্বইয়ে (তখনকার বোম্বে) – ১৯৬৪ সালে। তার আগে দিল্লিতে ১৯৬৩ সালে এবং চেন্নাই (তখনকার মাদ্রাজ) ১৯৫৩ সালে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর কলকাতা শহরে প্রায় ৫০টি রুটে ট্রাম চলত। এখন সেই সংখ্যা এসে ঠেকেছে ৩টিতে – এসপ্ল্যানেড-গড়িয়াহাট, এসপ্ল্যানেড-শ্যামবাজার এবং টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ।
“সমস্ত রুটে ট্রাম ফেরানোর জন্য আমরা বারবার আবেদন জানাচ্ছি সরকারের কাছে। কিন্তু তারা নাগরিকদের দাবিতে কর্ণপাতই করছে না”, বলেন সিটিইউএ-র সদস্য শৌভিক মুখোপাধ্যায়।
সিটিইউএ-র সভাপতি দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “ট্রাম কারও রাস্তা আটকায় না। বরং অবৈধ পার্কিং, ট্রামলাইন আটকে মাল ওঠানো-নামানো ইত্যাদির জেরে ট্রাম ঠিকমতো চলতে পারে না। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির গাইডলাইন অনুসারে আমরা ট্রাম ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।”