শ্রয়ণ সেন
কলকাতায় শুরু হয়েছে দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম পর্যটন মেলা ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম ফেয়ার (টিটিএফ ২০২৪)। ফেয়ার ফেস্ট মিডিয়া আয়োজিত এই মেলাকে ভ্রমণব্যবসায়ী ও ভ্রমণপিপাসুরা বলেন পর্যটনের কুম্ভমেলা।
‘টিটিএফ কলকাতা’ শুরু হয়েছে শুক্রবার অর্থাৎ ১২ জুলাই। চলবে ১৪ জুলাই রবিবার পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে সায়েন্স সিটির মোড়ে বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণ তথা মিলনমেলা প্রাঙ্গণে।
মেলার প্রথম দিন সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য, যাকে ব্যবসায়িক পরিভাষায় বলা হয় ‘বি টু বি’ অর্থাৎ ‘বিজনেস টু বিজনেস’। শনিবার থেকে মেলা খুলে দেওয়া হয়েছে সর্বসাধারণের জন্য, যাকে ব্যবসায়িক পরিভাষায় বলা হয় ‘বি টু সি’ অর্থাৎ ‘বিজনেস টু কাস্টমার’।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের হোটেলমালিক এবং পর্যটনব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমাদের রাজ্যের হোটেল ও পর্যটন ব্যবসায়ীরাও এই মেলায় যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও রাজস্থান, কেরল, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, গুজরাত, তামিলনাড়ু, গোয়া, বিহার, ঝাড়খণ্ড রাজ্য পর্যটন দফতর মেলায় যোগ দিয়েছে। রয়েছে বড়োল্যান্ড ট্যুরিজম। শুধু আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই নয়, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, তাইল্যান্ড এবং ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ের মতো সুদূর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলি থেকেও পর্যটন-প্রতিনিধিরা এসেছেন মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য।
টিটিএফ আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের ২৬টি রাজ্য এবং ১০টি বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে চারশোরও বেশি প্রদর্শক তাঁদের প্রদর্শনযোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন।
এবার মেলায় শ্রীলঙ্কার চোখে পড়ার মতো। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তারা যে আবার জেগে উঠছে তার প্রমাণ তারা রেখে যাচ্ছে কলকাতায় আয়োজিত টিটিএফ-এ। বিপুল পর্যটনসম্পদে সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা পর্যটকদের কাছে এক বড়ো আকর্ষণের জায়গা। এ দেশ থেকে যাতায়াতের খরচ বাদ দিলে শ্রীলঙ্কা ঘুরে আসতে খুব বেশি খরচ হয় না। মেলায় দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য শ্রীলঙ্কা তাদের লোকশিল্পীদের দিয়ে নানা ধরনের লোকনৃত্য ও লোকসংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছে।

পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। শুক্রবার মেলায় তারা এক প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা করে। বিকেল ৩টে থেকে শুরু হয় ওই প্রেজেন্টেশন। বাংলাদেশে কেন যাবেন, সেটাই ব্যাখ্যা করা হয় ওই প্রেজেন্টেশনে।
প্রত্যেক বছরই সর্বসাধারণের জন্য মেলা খুলে দেওয়ার পর শেষের দু’ দিন মেলায় বেশ ভালো ভিড় হয়। ভ্রমণপিপাসু মানুষজন বিভিন্ন স্টলে ভিড় করেন এবং ভ্রমণ বিষয়ে তাঁদের নানা কৌতূহল মেটান। ভ্রমণ সংক্রান্ত নানা কাগজপত্র সংগ্রহ করেন তাঁরা। এবারেও তার অন্যথা হবে না, তা বলাই বাহুল্য। মেলার দিনগুলোয় সেমিনার, আলোচনাসভা হবে। এতে যোগ দেবেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা যাঁরা পর্যটনের বিকাশ নিয়ে চিন্তাভবনা করেন এবং পর্যটনশিল্পে যাঁরা অভিজ্ঞ তাঁরা। এই সেমিনার, আলোচনাসভায় যোগদানকারী শ্রোতা-দর্শকরা ইচ্ছা করলে প্রশ্ন করতে পারবেন।
রবিবার মেলায় উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে ফেয়ার ফেস্ট মিডিয়ার চেয়ারম্যান ও সিইও সঞ্জীব আগরওয়াল বলেন, “ধারাবাহিকভাবে কলকাতায় টিটিএফ আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। বছরের পর বছর ধরে এই মেলার আয়তন, পরিধি বেড়েই চলেছে। কলকাতা যে পূর্ব ভারতের বাজারে সিংহদুয়ার এতেই তা প্রমাণিত হয়। এ বছর যতটা জায়গা জুড়ে মেলা হচ্ছে। তা আগেকার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ বেশ ভালো বেড়েছে।”
ছবি: প্রতিবেদক
আরও পড়ুন
নিষেধাজ্ঞা উঠল দু’ বছর পর, শ্রাবণীমেলায় জল্পেশ মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে পারবেন পুণ্যার্থীরা