কলকাতা: ‘রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম’। দু’ বছর পর ফিরে এল সেই চেনা ছবি। সারা দেশের সঙ্গে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গেও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হল শ্রীশ্রীজগন্নাথের রথযাত্রা।
গত দু’ বছর করোনার কারণে রথের চাকা না গড়ালেও এ বছরে কোনো বাধা ছিল না। তাই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বড়ো-মাঝারি-ছোটো মিলিয়ে অসংখ্য শোভাযাত্রা বেরোয়।
এ দিন শহরে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শোভাযাত্রাটি ছিল ইসকনের রথকে ঘিরে। শুক্রবার বিকেলে এই শোভাযাত্রা হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট, এ জে সি বসু রোড, শরৎ বসু রোড, হাজরা, এস পি মুখার্জি রোড, চৌরঙ্গি, এক্সাইড, জওহরলাল নেহরু রোড, উট্রাম রোড হয়ে ময়দানে পৌঁছোয়।

শোভাযাত্রার সূচনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রথিতে রশিতে টান দিয়ে যাত্রার সূচনা করেন। রথের যাত্রাপথে গঙ্গাজলও ছিটিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সাংসদ নুসরত জাহান এবং বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী।
শহরে রথের ভিড় সামলাতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত প্রায় দু’হাজার পুলিশ রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছিল।
জায়গায় জায়গায় নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরা। প্রস্তুত ছিল কুইক রেসপন্স টিম, উইনার্স টিমও। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারিও চালানো হয়েছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি।

এ দিন ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে কলকাতা শহরে ‘ধার্মিক একতা রথযাত্রা’র আয়োজন করা হয়। সব ধর্মের মানুষজন ওই রথযাত্রায় যোগ দেন। এই রথযাত্রার আয়োজন করেছিল ধার্মিক একতা ট্রাস্ট। শহরে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম।
বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রধানরা ওই শোভাযাত্রায় যোগ দেন। বিকেল সোয়া ৩টে নাগাদ ওই শোভাযাত্রা শুরু হয় শোভাবাজার থেকে। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ শেষ হয় রবীন্দ্রসদন-অ্যাকাডেমি চত্বরে। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতারা ধর্মীয় ঐক্য ও সংহতির বার্তা দেন।

রথযাত্রার সঙ্গে বাঙালির শারদোৎসবের যোগ রয়েছে। আর ঠিক তিন মাস পরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজারও প্রস্তুতি শুরু হয় রথের দিন। এ দিন বহু বনেদি বাড়িতে দেবী দুর্গার কাঠামোপুজো হয়েছে। কুমারটুলিতেও কাঠামোপুজো হয়।
কাঠামোপুজোর পাশাপাশি বহু সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় এ দিন খুঁটিপুজোর আয়োজন করা হয়। এমনই একটি খুঁটিপুজো ছিল উত্তর শহরতলির শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। সেই খুঁটিপুজোয় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, বাংলার ক্রিকেটার তথা মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং সাংসদ-অভিনেতা দেব।

এই রথযাত্রার দিনেই বাংলার সংস্কৃতি জগতে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। যাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। উৎসবের সূচনা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
ছবি: রাজীব বসু
আরও পড়তে পারেন
পর্যটনমেলা ‘টিটিএফ কলকাতা’ শুরু হল মিলনমেলা প্রাঙ্গণে, চলবে রবিবার পর্যন্ত
পন্থের মহাকাব্যিক শতরান, স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন ভারতের
অমিত শাহ কথা রাখলে এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার দরকার হতো না, আক্ষেপ উদ্ধবের