কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, যেটি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রে। এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৮৬ সালে, এবং এটি ছিল এশিয়ার প্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। তবে এর আগে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ।
আরজি কর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ড. রাধা গোবিন্দ কর। তিনি ১৮৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ড. কর। তাঁর চেয়ে ৯ বছরের ছোট আরও এক বিশিষ্ট চিকিৎসক, ড. নীলরতন সরকার, যিনি পরবর্তীতে নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি মেডিক্যাল কলেজই কলকাতার শীর্ষ সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।
ড. রাধা গোবিন্দ কর ১৯১৮ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই কলেজের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৫৮ সালের ১২ মে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে এই কলেজে পোস্ট-ডক্টরেট, পিজি ডিপ্লোমা, ফেলোশিপ, এবং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামগুলির সুযোগ রয়েছে।
ড. রাধা গোবিন্দ করের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ড. রাধা গোবিন্দ কর ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং তাঁর চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল শৈশব থেকেই। তিনি বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেন, যা তখন এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিক্যাল কলেজ ছিল। পরবর্তীতে এই কলেজটি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ নামে পরিচিত হয়। তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশোনা করেন এবং ১৮৮৬ সালে ভারতে ফিরে আসেন।
ভারতে ফিরে এসে ড. রাধা গোবিন্দ কর উপলব্ধি করেন যে, কলকাতায় তখনকার জনসংখ্যার তুলনায় হাসপাতালের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। সেই সময় কলকাতা কলেরা, প্লেগের মতো মহামারির কবলে ছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি একটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।
আরজি কর হাসপাতালের নামকরণ
১৮৯৮ সালে বেলগাছিয়ায় ৪ একর জমি ১২,০০০ টাকায় কেনা হয় এবং সেখানে হাসপাতালের প্রথম ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ১৯০২ সালে হাসপাতালের উদ্বোধন করেন তৎকালীন গভর্নর লর্ড উডবার্ন। হাসপাতালটির নাম রাখা হয়েছিল ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টরের নামে।
১৯৪৮ সালের ১২ মে হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রাখা হয় ড. রাধা গোবিন্দ করের নামে। আজ, ১৩৮ বছর পর, এই প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত।
আরও পড়ুন
মানুষ কি খেপবে না? মানুষ কেন খেপবে না?