আজ মহাসপ্তমী: ষষ্ঠীর কলকাতা উৎসবমুখর

0
ষষ্ঠীর কলকাতা।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় শিবমন্দির। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

কলকাতা: আসলে করোনায় ক্লান্ত মানুষ রয়েছে ঘরবন্দিদশা মুক্তির খোঁজে। তাই করোনার ভয়ভীতি কাটিয়ে একটু একটু করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। তা বলে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার কোনো প্রবণতা চোখে পড়েনি ষষ্ঠীর কলকাতায়।

করোনার প্রথম বছরের দুর্গাপূজার ছবির সঙ্গে এ বারের ছবি মেলালে হয়তো কেউ কেউ হায় হায় করে উঠবেন। বলবেন, এ কী হল, এ যে বাঁধভাঙা ভিড়।

না, এ দিন শহরের কোথাও সারা দিনের কোনো সময়ে লাগামছাড়া ভিড় চোখে পড়েনি। গত বছর বাদ দিয়ে বাকি বছরগুলোর সঙ্গে মেলালে বোঝা যাবে, এ ভিড় সে ভিড় নয়। একে বাঁধভাঙা ভিড় বলে না।

অবশ্যই গতকাল রবিবারের চেয়ে সোমবার ষষ্ঠীর দিন মহানগরের পূজামণ্ডপগুলিতে ভিড় বেশি চোখে পড়েছে। তবে মনে রাখতে হবে আজ ছিল সে অর্থে কাজের দিন। অফিসকাছারির ছুটি শুরু হবে কাল সপ্তমীর দিন থেকে। তাই সোমবার স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তাঘাটে মানুষ ও গাড়ির ভিড় ছিল রবিবারের চেয়ে অনেক বেশি।

Durgapuja shashthi sovabajar 12.10
ষষ্ঠীর দিন শোভাবাজার রাজবাড়ি। ছবি: রাজীব বসু।

তবে ষষ্ঠীর শহরের ছবি দেখলে বোঝা যায়, বাঙালির সব চেয়ে বড়ো উৎসব দুর্গোৎসবে কলকাতা মেতে উঠেছে। করোনার ভয়ে ঘরবন্দি থেকে আর তারা মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে চাইছে না। শহরের বেশ কিছু বনেদি বাড়িও কোভিড স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর রেখে এ বছর বাইরের মানুষের জন্য তাদের পুজোর দরজা খুলে দিয়েছে।

পুজো দেখতে বেরিয়ে পড়েছে শিশুরাও। যথাসম্ভব রক্ষাকবচ নিয়ে অভিভাবকদের হাত ধরে তারা পথে নেমেছে। গত প্রায় দু’ বছর ধরে স্কুল বন্ধ, কার্যত খেলাধূলাও বন্ধ। তারাও ক্লান্ত। তাদের ক্লান্তি কাটাতে অভিভাবকরা বেছে নিয়েছেন দুর্গাপূজাকেই।

Durgapuja shashthi md ali 12.10
মহম্মদ আলি পার্কের পুজো দেখতে জমায়েত। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

আর সত্যি কথা বলতে কী, গত বছরের সঙ্গে এ বছরের করোনা পরিস্থিতিরও বিস্তর ফারাক রয়েছে। গত বারের করোনা পরিসংখ্যানের সঙ্গে এ বারের করোনা পরিসংখ্যানের তুলনা করলে বোঝা যাবে, করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সারা দেশেই এক ছবি। আমাদের পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়।

তার ওপর গত বার টিকা ছিল না। এ বার অধিকাংশেরই অন্তত এক ডোজ টিকা তো হয়েই গেছে। আর অনেকেরই দু’ ডোজ টিকাও সম্পূর্ণ। আর অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, আর পাঁচটা রোগের মতো কোভিডও জীবনের অঙ্গ হয়ে থাকবে বেশ কয়েকটা বছর।  

Durgapuja shashthi 21 palli 12.10
একই ছবি বালিগঞ্জের ২১ পল্লি পূজামণ্ডপে। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

তাই উৎসব উপভোগ করতে অনেকেই পথে পা বাড়িয়েছেন। সেই ছবিই ষষ্ঠীতে ধরা পড়ল কলকাতায়। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে মহানগরী।

তবে ভিড়ের তারতম্য আছে গোটা শহর জুড়ে। এক একটা পূজামণ্ডপে এক এক রকম ভিড়। ষষ্ঠীর বিকেলে মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্ক বা বালিগঞ্জের ২১ পল্লি মণ্ডপের সামনে যে ভিড় দেখা গেল তা অকল্পনীয়। গোনাগুনতি মানুষ প্রতিমা দর্শন করছেন। হয়তো রাত বাড়লে, ভিড় বাড়বে। তবে সেই ভিড় যে আতংক ছড়ানোর মতো ভিড় হবে না, তা হলপ করে বলা যায়।

Durgapuja shashthi astro 12.10
ষষ্ঠীর বোধন। মায়ের হাতে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র। ছবি: রাজীব বসু।

তুলনায় বেশি ভিড় দেখা গেল দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া, মুদিয়ালি, শিবমন্দির, লেক সেবক সংঘের মতো পূজামণ্ডপগুলিতে। তবে সেই ভিড় কখনোই অন্যান্য বছরের মতো নয়ই।

ও-দিকে হাইকোর্টের নির্দেশও অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে পূজাকমিটিগুলি। ফলে ভিড়ও ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মণ্ডপই প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ আলাদা রেখেছে। মূল মন্ডপে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মণ্ডপ থেকে বেশ কিছুটা দূরেই দর্শকদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। এবং মানুষ যাতে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় আটকে না থাকেন তার দিকে নজর রাখছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

Durgapuja shashthi mudiali 12.10
মুদিয়ালি ক্লাব। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

আলাদা করে বলতে হয় দর্শকদের কথাও। মাস্কবিহীন প্রায় কাউকে দেখাই যাচ্ছে না। নিজেরাই স্যানিটাইজার সঙ্গে রেখেছেন। যিনি দৈবাৎ মাস্ক ছাড়া আসছেন, তাঁকে মাস্ক দিচ্ছে পূজাকমিটি।

আর পূজামণ্ডপে যতটুকু ভিড় দেখা গেছে তা সবটাই সন্ধের মুখে। এবং ভিড় যা তা পদব্রজেই। জনগণের যানবাহনে ভিড় নেই বললেই চলে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তাঘাটে ভিড় কমতে শুরু করে, কমতে থাকে গাড়ির সংখ্যাও। যে ছবি পুজোর কলকাতায় দেখা যায় না।

মোটের ঊপর, কোভিড সম্পর্কে সচেতন থেকেই কলকাতাবাসী এ বারের পুজো উপভোগ করছে।

আরও পড়তে পারেন        

পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৭টি রাজ্যের জন্য ৯,৮৭১ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি অনুদান কেন্দ্রের

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকলায় সেজে উঠেছে জয়নগরের ১২৯টি পুজো মণ্ডপ

পুঞ্চে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত সেনাকর্তা, ৪ জওয়ান

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দ্রুত বাড়ছে ‘নারীশক্তি’, জানুন কোন বাহিনীতে কত জন মহিলা রয়েছেন

দৈনিক সংক্রমণ কমল আরও, মৃতের সংখ্যাও নামল দুশোর নীচে

শুকনো উত্তুরে হাওয়া প্রবেশ করলেও বঙ্গে পারদ পতন এখনই নয়

বিজ্ঞাপন