আজ মহাষ্টমী। শাস্ত্রমতে দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন। সকাল থেকেই সর্বজনীন পূজামণ্ডপে এবং গৃহস্থবাড়িতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। অষ্টমীতিথির পুজোর পরে চলছে অঞ্জলির তোড়জোড়।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, অষ্টমী শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত্রি ১টা ৪৮ মিনিটে, এবং চলবে আজ বুধবার রাত্রি ১১টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, অষ্টমী শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত্রি ৯টা ৪৭ মিনিটে, এবং চলবে আজ বুধবার রাত্রি ৮টা ৮ মিনিট পর্যন্ত।
বাঙালির কাছে অষ্টমীপুজোর গুরুত্ব অন্য জায়গায়। পুজোর বাকি দিনগুলোতে মাকে অঞ্জলি দেওয়া হোক বা না-ই হোক, অষ্টমীতে দেওয়া চাই-ই। অন্তত আজকের দিনটিতে বাঙালি অন্য রকমের পোশাক ছেড়ে ট্রাডিশনাল পোশাক পরে অঞ্জলি দেয়। মেয়েরা শাড়ি, আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-ধুতি বা পাঞ্জাবি-পাজামা।

গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে পূজামণ্ডপে অঞ্জলি দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এ বছর হাইকোর্ট তাদের নির্দেশে কড়াকড়ি একটু শিথিল করেছে। কোভিড ভ্যাকসিনের জোড়া টিকা যাঁদের নেওয়া রয়েছে তাঁরা অঞ্জলিতে যোগ দিতে পারবেন।
অষ্টমীর দিন অনেক বাড়িতে নিরামিষ ভোজনও একটা প্রথা হিসাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এ দিন নিরামিষ ভোজন করার পর নবমীতে কবজি ডুবিয়ে মাংস ভক্ষণ। তবে বহু বাড়িতে অষ্টমীর দিন ইলিশ মাছ খাওয়ারও রেওয়াজ আছে।
বেলুড় মঠে কুমারীপুজো
অষ্টমী তিথিতে কুমারীপুজোর চল রয়েছে বহু আশ্রম, মঠ ও বনেদি বাড়িতে। বাগবাজার সর্বজনীনের মতো কিছু সর্বজনীন পূজামণ্ডপেও কুমারীপুজো হয়।
এ দিন সকাল ৯টায় বেলুড় মঠে ভক্তমানুষের অনুপস্থিতিতেই কুমারীপুজো সম্পন্ন হয়। করোনার জেরে গত দু’ বছর ধরেই কুমারীপুজোয় বেলুড় মঠে দর্শকদের প্রবেশ নিষেধ।

২০০০ সাল পর্যন্ত বেলুড়ে কুমারীপুজো মন্দিরে অনুষ্ঠিত হলেও ২০০১ সাল থেকে পুজো শুরু হয় মন্দির লাগোয়া মাঠে। গত বছর করোনা পরিস্থিতির জেরে সেই পুজো ফিরে এসেছে মূল মন্দিরের পশ্চিম বারান্দাতেই।
বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ভোর ৫টা ৪০-এ শুরু হওয়া মহাষ্টমীর পুজো এবং সকাল ৯টায় শুরু হওয়া কুমারীপুজো ভক্তদের জন্য লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
১৯০১ সালে বেলুড় মঠে কুমারীপুজোর সূচনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। মা সারদার উপস্থিতিতে শঙ্খ, বাদ্য, অর্ঘ, বলয় ও বস্ত্রাদি সহযোগে ৯ জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন তিনি৷
অষ্টমীতেও মাতবে কলকাতা
অষ্টমীর সকালে বাঙালি ব্যস্ত থাকে পুজো ও অঞ্জলি নিয়ে। তাই সাধারণ ভাবে মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পাড়ার পুজোতেই আটকে থাকে। তবে বিকেল হলেই শহরের চেহারা পালটাবে। সপ্তমীতে মানুষ যে কলকাতা দেখেছে, সেই চেহারাই যে দেখা যাবে শহরের তা বলাই বাহুল্য।

গত বছরের মতো এ বছর আর করোনার ভয়ে মানুষ ঘরবন্দি থাকছে না। তার দু’টো কারণ – প্রথমত, ভয় কাটানোর সাহস অর্জন করেছেন অনেকেই, আর দ্বিতীয়ত অনেকেরই একটি বা দুটি টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
তাই এ বারের পুজোয় কলকাতা শহরের চেহারা কিন্তু গত বছরের থেকে আলাদা। পূজামণ্ডপে ভিড় হচ্ছে, তবে কখনোই তা লাগামছাড়া নয়। আর সচেতন সবাই। মাস্কবিহীন অবস্থায় কাউকে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎসবের আনন্দ চেটেপুটে আস্বাদ করছে বাঙালি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মণ্ডপে মণ্ডপে মাস্কঢাকা মুখের ভিড় বাড়বে। আর কোভিডবিধি মেনেই চলবে দেদার আড্ডা, খাওয়াদাওয়া। কিন্তু একটু বাধ সাধতে পারে আবহাওয়া। সারা দিনেই বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আজ রাতেই সন্ধিপুজো
দু’টি পঞ্জিকা মতেই সন্ধিপূজা বুধবার অষ্টমীর রাতেই। তাই এ বার পূজা আয়োজকরা বুধবার রাতেও ব্যস্ত থাকবেন পূজার জোগাড়যন্ত্রে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, সন্ধিপুজো শুরু হবে রাত্রি ১১টা ২৫ মিনিটে, এবং চলবে রাত্রি ১২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত। বলিদান রাত্রি ১১টা ৪৯ মিনিট গতে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, সন্ধিপুজো শুরু হবে রাত্রি ৭টা ৪৪ মিনিটে, এবং চলবে রাত্রি ৮টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। বলিদান রাত্রি ৮টা ৮ মিনিট গতে।
আরও পড়তে পারেন
৩৩ বছর ধরে চলছে বাহরাইন বঙ্গীয় সমাজের পুজো
পটলডাঙার বসুমল্লিক বাড়ির পুজোর এ বার ১৯১ বছর
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকলায় সেজে উঠেছে জয়নগরের ১২৯টি পুজো মণ্ডপ
বড়িশা ক্লাবে এ বার ‘ভাগের মা’
হীরকজয়ন্তী বর্ষে লাইব্রেরি বানিয়ে বাবুবাগান শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বাংলার মনীষীদের
দুর্গাপুজোর মণ্ডপসজ্জায় ‘রাজনৈতিক ইস্যু’, পুজো কমিটিকে আইনি নোটিশ
নোটিশ পেয়েও জুতো সরাতে নারাজ পুজো কমিটি, আইনি পথেই জবাব
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।