কলকাতা: আবার সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গোড়া থেকেই দলের লাইনে না গিয়ে গণ-আন্দোলনের পাশে থেকেছেন তিনি। এবার রাত দখলের পাশাপাশি সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়েও সরব হতে বললেন তৃণমূল সাংসদ।
বুধবার ৪ আগস্ট রাত ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঘরের আলো নিভিয়ে হাতে আলো জ্বালিয়ে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। এই কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে অনেকে মানববন্ধন করতে চান সেই সময়ে। সেই কর্মসূচির কিছুক্ষণ আগে দুপুরে সুখেন্দুশেখর তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘রাতের দখল নেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ থাকা নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারও চাই।’’
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের ঘটনা সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগেই বুধবার আবার রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের এই ডাকে সাড়া দিয়ে পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই সময় দলীয় সাংসদের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে আবার অস্বস্তি বাড়াবে তৃণমূল কংগ্রেসের।
আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ আগস্ট ছিল প্রথম রাত দখল কর্মসূচি। তাতে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, তিনি মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। তাই তাঁর মনে হয়েছে এই সময়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়াটা খুব জরুরি। সেইমতো ১৪ তারিখ যোধপুর পার্কে নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধর্নাতেও বসেছিলেন সুখেন্দু। এর পরেই দলের আরও অস্বস্তি বাড়িয়ে নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে পুলিশ কমিশনার এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।
সুখেন্দু তাঁর পোস্টে লেখেন, “সিবিআই সঠিকভাবে তদন্ত করুক। সিপি, প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করুক, কারা আত্মহত্যার কথা রটিয়েছিল? কেন ঘটনার তিনদিন পরে ঘটনাস্থলে স্নিফার ডগ আনা হলো? কেন সেমিনার হলের দেওয়াল ভাঙা হল? এরকম শতাধিক প্রশ্ন আছে। তাহলেই জানা যাবে কীভাবে তাঁরা এতটা প্রভাবশালী, কাদের আশ্রয়ে এই কর্মকাণ্ড।”
এর পরেই ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কলকাতা পুলিশ সুখেন্দুকে লালবাজারে ডেকে পাঠায়। যদিও তিনি হাজির হননি।
তারপর সুখেন্দুশেখর রায় ২০ আগস্ট উচ্চ আদালতে নিজের ভুল স্বীকার করে জানান যে, সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টে কিছু তথ্যগত বিভ্রান্তি ছিল এবং তিনি সেই পোস্টটি মুছে দেবেন। সেই পোস্টটি পরে আর দেখা যায়নি, তাই ধারণা করা হয় সুখেন্দু তাঁর এক্স হ্যান্ডেল থেকে সেটি ডিলিট করেছেন।
এর পরে সমাজমাধ্যমে আবার সক্রিয় হন তৃণমূল সাংসদ। ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত একটি কার্টুন শেয়ার করেন তিনি। আরকে লক্ষ্মণের আঁকা ১৯৬২ সালের ২৬ ডিসেম্বরের ওই কার্টুনে দেখা যাচ্ছে পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তলায় লেখা, ‘‘এটা ঠিক যে, আপনি গুজব ছড়াচ্ছিলেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি সঠিক তথ্য ছড়াচ্ছিলেন।’’ পুরোনো সেই কার্টুনটি নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে শেয়ার করে অট্টহাসির একটি ইমোজি দেন সাংসদ। এর পর গত রবিবার তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট দিয়ে বাস্তিল দুর্গের পতনের কথা মনে করিয়ে দেন।
এবার আবার নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিলেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। আরজি কর কাণ্ডের বিচারের দাবিতে গণ-আন্দোলনের সময়ে কেন তিনি এটা মনে করিয়ে দিলেন সেই প্রশ্নই জাগছে।
আরও পড়ুন
আরজি কর কাণ্ডের বিচারের দাবিতে পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত ইএম বাইপাস বরাবর অভিনব মানববন্ধন