খবর অনলাইন : সাধারণত এই পোর্টালটা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। এটা রেলবোর্ডের পোর্টাল। খুললেই দেখা যাবে, একটা স্ক্রল যাচ্ছে – ‘ভারতীয় রেল আপনার যাত্রার ৪৩ শতাংশ খরচ বহন করে’। যার মোদ্দা মানে হল, আপনার রেলভ্রমণের জন্য আপনি যে খরচ করেন অর্থাৎ যে দামে টিকিট কাটেন তাতে আপনার রেলে ভ্রমণখরচের ৫৭ শতাংশ ওঠে। বাকি খরচা দেয় রেল। অর্থাৎ আপনার ভ্রমণখরচের প্রায় অর্ধেকটাই রেল দিয়ে দেয়। রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যাত্রীসাধারণের কাছ থেকে রেলের যে ভাড়া নেওয়া উচিত, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তারা সেটা নিতে পারে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত তারা তাদের ওয়েবসাইট মারফত জনসাধারণকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, তারা কত বড়ো সমাজসেবা করে চলেছে।
রেল কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, নতুন জমানায় হয়তো যাত্রীভাড়া বাড়িয়ে রেলকে আর্থিক সংকট থেকে বার করে আনা হবে। কিন্তু রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বাঁধা গতে চলার পাত্র নন। রেলের লোকসান কমাতে তিনি যাত্রীভাড়া সরাসরি বাড়িয়ে রাজনৈতিক ভাবে অপ্রিয় হতে চান না। তাই ২০১৬ রেল বাজেটে তিনি যাত্রীভাড়া বাড়াননি। মন্ত্রী বলেন, “যখনই আপনি ভাড়া বাড়ান, তখনই ভাড়াবৃদ্ধি ছাড়াও আরও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।” তিনি মনে করেন, আগে পরিষেবা উন্নত করার দিকে রেলের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। অন্য পথে কী ভাবে সম্পদ বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার।
এই অন্য পথের সন্ধান রেলমন্ত্রী পেয়ে গেছেন। উন্নত পরিষেবা দেওয়ার নামে ভারতীয় রেল এমন সব ট্রেন লাইনে নামাতে চলেছে, যার জন্য যাত্রীসাধারণকে তাদের পকেট থেকে অনেক বেশি টাকা গুনতে হবে। এর প্রমাণ তো হাতে হাতেই আছে। প্রথমে এসেছিল ‘সুবিধা’ ট্রেন, তার পর এল ‘মহামনা’, আর এখন এল গতিমান। ‘সুবিধা’ চলে ‘চাহিদাভিত্তিক ভাড়া’র পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বিমানের মতো। যাত্রার দিন যত এগিয়ে আসে, ভাড়া তত বেড়ে যায়। জনপ্রিয় ট্রেনগুলোয় যখন জায়গা থাকে না, তখন নির্ভর করতে হয় ‘সুবিধা’র ওপর। ভারতীয় রেলে এমন অসংখ্য যাত্রী আছেন, যাঁদের অল্প সময়ের নোটিশে ট্রেনে চাপতে হয়। তখন হয়তো তৎকালেও টিকিট থাকে না। তখন ভরসা ‘সুবিধা’। ‘মহামনা’-এ নতুন ধরনের আধুনিক কোচের সুবিধা দিয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
এর পর এসেছে ‘গতিমান’। উন্নত পরিষেবা, দ্রুত গতির নামে বিত্তশালীদের ট্রেন শতাব্দীর চেয়েও ‘গতিমানে’ ভাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। উন্নত পরিষেবার নামে আছে ট্রেনবালা, বায়ো-টয়লেট আর আপনার পচ্ছন্দমতো আরও ভালো খাবার। বায়ো-টয়লেট তো এখন যুগের ধর্ম। দেশের সব ট্রেনেই বায়ো-টয়লেট ব্যবস্থা করার কথা ভারতীয় রেলের। আর রাজধানী-শতাব্দীতে খাবারের মান নিয়ে মাঝে মাঝে প্রশ্ন উঠলেও সাধারণ ভাবে মান খারাপ নয়। নতুন সংযোজন ট্রেনবালা। আর গতি ? হিসাব করে খবর অনলাইন-ই দেখিয়েছে, গতির লড়াইয়ে শতাব্দীর চেয়ে এমন কিছু এগিয়ে নয় ‘গতিমান’। রেল কর্তৃপক্ষ যতই একে সেমি-বুলেট ট্রেনের তকমা দিক, দিল্লি থেকে আগরা যেতে শতাব্দী আর গতিমানের মধ্যে সময়ের ফারাক পাঁচ-সাত মিনিট। রেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, সেমি-বুলেটের পর আসবে বুলেট। গতি আরও বাড়বে। ঘণ্টায় ১৬০ কিমি থেকে ১৮০ কিমি, ১৮০ কিমি থেকে ২০০ কিমি, তার পর ২২০ কিমি ইত্যাদি ইত্যাদি।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।