শ্যামলেশ মাইতি
শুক্রবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন আপাতত অর্থ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পীযুষ গয়াল। সাধারণত বাজেট পেশ করা হয় সমগ্ৰ অর্থ বছরের জন্য। বাজেটে কোনো সরকার তাদের রাজনৈতিক নীতি প্রতিফলিত করতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু ভোট অন অ্যাকাউন্টে রাজনৈতিক নীতি প্রয়োগের সুযোগ কম। কারণ কোনো সরকার নির্বাচনের বছরেই ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেন, পরবর্তী আর্থিক বছরের প্রথম চার মাসের অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য। দেশে যে হেতু লোকসভা নির্বাচন আসন্ন এবং নির্বাচনে জিতে যে কোনো দলই ক্ষমতাসীন হতে পারে সে জন্য বতর্মান সরকার নীতিগত ভাবে পুরো বছরের বাজেট পেশ করতে পারে না। বতর্মান সরকার কেবলমাত্র ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করতে পারে। সে জন্য পীযুষ গয়াল শুক্রবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে লোকসভায় ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন।
আরও পড়ুন ভোটের আগে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে পারে ভারতে, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে উদ্বেগ
সাধারণ ভাবে ভোট অন অ্যাকাউন্ট নিয়ে আমজনতার খুব বেশি আগ্ৰহ থাকে না। থাকার কথাও নয়। কিন্তু শুক্রবার পেশ হতে চলা ভোট অন অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জনমানসে প্রবল আগ্ৰহ তৈরি হয়েছে। কারণ পাঁচ রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফল। কোনো রাজ্যেই বিজেপি সাফল্য পায়নি। শুধু তা-ই নয়, গত এক বছরে বিজেপির নির্বাচনী সাফল্য খুবই হতাশাময়। শাসকদল বিজেপির ওই ফলের জন্য নোটবন্দি, অপরিকল্পিত ভাবে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করা, কৃষকদের দুরবস্থা, আর্থিক দুর্নীতি ইত্যাদিকে দায়ী করা হচ্ছে।
চলতি বছরের বাজেটকে আমরা ধনীদের পৌষমাস, মধ্যবিত্তের সর্বনাশ বলে ব্যাখ্যা করেছিলাম। আর্থিক বছরের শেষ সীমায় এসে আমাদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। কৃষিঋণের বোঝা টানতে না পেরে হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁরা রাজপথে মিছিলে শামিল হয়েছেন। দেশের মানুষের মনে শাসকের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে।
আরও পড়ুন অন্তর্বর্তী নয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট! ঐতিহ্য ভাঙতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার, ইঙ্গিত রিপোর্টে
এ অবস্থায় ভোট অন অ্যাকাউন্ট শাসক বিজেপির কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে। অর্থাৎ এ বারের ভোট অন অ্যাকাউন্টও জনমোহিনী হতে চলেছে। মেয়াদকালের শেষ পর্যায়ে এসে মোদী সরকার যে সব পদক্ষেপ নিতে পারে, সেগুলো হল –
(এক) নোটবন্দির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যে অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েছে তাদের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ব্যাঙ্কঋণের ব্যবস্থা করা।
(দুই) পণ্য ও পরিষেবা করের ফাঁস থেকে আরও কিছু শিল্প ও ব্যবসাকে স্বস্তি দেওয়া।
(তিন) বিপুলসংখ্যক কৃষককে উদার হাতে দেশের সম্পদ বিলি করা।
সন্দেহ নেই, এই তিন ক্ষেত্রে নিপুণ হাতে প্রলেপ দিতে পারলে বিজেপির ভোটবাক্সে সুফল মিলতে পারে। কিন্তু দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে সুফল আসবে কি?
(প্রাক্তন বাণিজ্য বিভাগীয় প্রধান, যোগমায়াদেবী কলেজ)
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।