নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির বিনামূল্যে সুবিধা দেওয়ার প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানায়, এই ধরনের সুবিধার ফলে মানুষ কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে দেশ কি এক “পরজীবী শ্রেণি” তৈরি করছে না, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতিরা।
শহরাঞ্চলের গৃহহীনদের আশ্রয়ের অধিকারের বিষয়ে এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি বিআর গাভৈ এবং এজি মাসিহর বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মানুষকে কাজ না করেও রেশন ও টাকা দেওয়া হচ্ছে। আদালত প্রশ্ন তোলে, “মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে এনে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করানোর পরিবর্তে কি আমরা তাদের এক পরজীবী শ্রেণিতে পরিণত করছি না?”
বিচারপতি গাভৈ মহারাষ্ট্রের ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “দুঃখজনক ভাবে, নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রকল্প ঘোষণা করা হয়, যেমন ‘লাডকি বহিন’ বা অন্যান্য প্রকল্প। এর ফলে মানুষ কাজ করতে চায় না, কারণ তারা বিনামূল্যে রেশন ও টাকা পেয়ে যাচ্ছে।”
আদালত আরও বলে, “আপনারা গৃহহীনদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করাই কি ভালো নয়?”
বিতর্কের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রের প্রসঙ্গ
যখন মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দাবি করেন, “দেশে এমন কেউ নেই যে কাজ পেতে চায় না”। তখন বিচারপতি গাভৈ তাঁকে থামিয়ে বলেন, “আপনার জ্ঞান একপাক্ষিক। আমি কৃষক পরিবার থেকে এসেছি। নির্বাচনের আগে ঘোষিত বিনামূল্যে সুবিধার কারণে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা শ্রমিক পাচ্ছে না।”
বিনামূল্যে সুবিধার ভারসাম্য প্রয়োজন
আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলে, গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তা একটি সুষম নীতি মেনে হওয়া উচিত। অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি জানান, কেন্দ্র সরকার শহুরে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প চূড়ান্ত করছে, যা গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার সমাধান করবে।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও অতীত পর্যবেক্ষণ
শুনানিতে এক মামলাকারী দাবি করেন, সরকার শুধু ধনীদের জন্যই সহানুভূতি দেখায়। বিচারপতি গাভৈ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এখানে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবেন না। আমরা আদালতকে রাজনৈতিক বিতর্কের মঞ্চ হতে দেব না। সরকার কেবল ধনীদের জন্য কাজ করছে— আপনি কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারেন?”
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ছয় সপ্তাহ পর হবে। এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট বিনামূল্যে সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ডিসেম্বর, বিচারপতি সুর্য কান্ত এবং বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ জানতে পেরে বিস্ময় প্রকাশ করে যে, ২০১৩ সালের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় ৮১ কোটি মানুষ বিনামূল্যে বা ভর্তুকিযুক্ত রেশন পাচ্ছেন।
মহামারির পর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেওয়া বিনামূল্যে রেশন প্রসঙ্গে আদালত প্রশ্ন তোলে, “এই সুবিধা কতদিন চলবে? কেন আমরা কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছি না?”
দিল্লি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত
এই একই দিন, দিল্লি হাই কোর্ট আপ, কংগ্রেস এবং বিজেপির দেওয়া বিনামূল্যে সুবিধার প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে একটি আবেদন খারিজ করেছে। মামলাটি দায়ের করেছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি এসএন ধিংরা। তিনি দাবি করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলির এমন প্রতিশ্রুতি জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ এবং নির্বাচন কমিশনকে এগুলো অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে হবে।
হাইকোর্ট জানায়, এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানি চলছে এবং মামলাকারীকে সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।