মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯০০ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জাপান সরকার নানকাই ট্রাফ এলাকায় সম্ভাব্য ‘মেগা ভূমিকম্প’ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে।
নানকাই ট্রাফে মেগা ভূমিকম্পের আশঙ্কা
জাপানের নানকাই ট্রাফ, যা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত, সেখানে ৯ মাত্রার একটি ‘মেগা ভূমিকম্প’ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাপানের সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের ভূমিকম্প ব্যাপক সুনামি সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রায় ২৯৮,০০০ মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি ভূমিকম্পটি শীতকালে এবং রাতে ঘটে।
অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
এই মেগা ভূমিকম্পের কারণে ২৭০.৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন (জাপানের জিডিপির প্রায় অর্ধেক) অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ১২.৩ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
ভূমিকম্পের কারণ এবং ঝুঁকি
জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’-এর ওপর অবস্থিত, যা পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এখানকার প্রধান টেকটোনিক প্লেটগুলি হলো প্রশান্ত, ফিলিপাইন, হুয়ান ডি ফুকা, কোকোস এবং নাজকা প্লেট।
নানকাই ট্রাফের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০০ কিলোমিটার, যেখানে ফিলিপাইন সি প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে সরে যাচ্ছে। এই প্লেটগুলোর চাপ জমে জমে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়েছে, যা একবার মুক্তি পেলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে।
ওরফিশের আগমন কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস?
জাপানি লোককথায় ওরফিশকে বলা হয় ‘রিউগু নো সুকাই’ বা ‘সমুদ্র দেবতার দূত’। সম্প্রতি মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়া সুর উপকূলে ওরফিশের উপস্থিতি দেখা গেছে, যা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
এই গভীর সমুদ্রের মাছটি প্রায়ই ‘ডুমসডে ফিশ’ নামে পরিচিত, এবং এর আকস্মিক উপস্থিতি ভূমিকম্প বা সুনামির পূর্বাভাস বলে মনে করেন অনেকেই। অতীতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগেও ওরফিশের দেখা মিলেছিল।
২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্পের স্মৃতি
জাপান ২০১১ সালে ৯.০ মাত্রার তোহোকু ভূমিকম্প এবং সুনামি প্রত্যক্ষ করেছিল, যাতে প্রায় ২০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। সেই ঘটনার স্মৃতি এখনও জাপানিদের মনে তাজা।
সতর্কবার্তা জারি
গত বছর নানকাই ট্রাফ এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় জাপান প্রথমবারের মতো ‘মেগা ভূমিকম্প’ পরামর্শ জারি করেছিল। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ফিলিপাইন সি প্লেটের চাপ বৃদ্ধির কারণে ইউরেশিয়ান প্লেটে ধাক্কা লেগে মেগা ভূমিকম্প এবং সুনামি ঘটতে পারে।
জাপান সরকারের এই সতর্কবার্তা এবং সাম্প্রতিক ওরফিশের উপস্থিতি ভূমিকম্পের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।