কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপে ফের আত্মহত্যার ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে বেসরকারি ফিনান্সের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ৪২ বছর বয়সী তরুণ সাক্সেনা আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার সকালে বাড়ির পরিচারিকা তাঁর দেহ দেখতে পান। সুইসাইড নোটে তরুণ অভিযোগ করেছেন, গত দু’মাস ধরে সিনিয়রদের চাপে ও হুমকির মুখে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে কর্মস্থলে চাপ ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে।
তরুণের সুইসাইড নোটে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, বেসরকারি ফিনান্সের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে বারবার লক্ষ্য পূরণের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন এবং বেতন কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা প্রায়ই সেই ইএমআইয়ের টাকা নিজের পকেট থেকে মেটাতে বাধ্য হতেন, যা তাঁরা সময়মতো আদায় করতে পারেননি। তাঁর কথায়, “আমি ৪৫ দিন ধরে ঠিকমতো ঘুমাইনি। খেতেও পারছি না। প্রচণ্ড মানসিক চাপে রয়েছি। সিনিয়র ম্যানেজাররা যেকোনো মূল্যে লক্ষ্য পূরণের নির্দেশ দিচ্ছেন, নাহলে চাকরি ছাড়তে বলছেন।”
সুইসাইড নোটে তরুণ সাক্সেনা আরও লেখেন, “আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। আমার চিন্তার ক্ষমতা হারিয়েছি। আমি আর পারছি না।” স্ত্রী মেঘা ও দুই সন্তান, ইয়থার্থ এবং পিহুর জন্যও সুইসাইড নোটে তিনি শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্ষমা চেয়েছেন। তরুণ লিখেছেন, “আমি আমার সন্তানদের স্কুলের ফিস পুরো বছরের জন্য দিয়ে দিয়েছি। তোমরা মেঘা, ইয়থার্থ এবং পিহুর যত্ন নিও। মম্মি, পাপা, আমি কখনও কিছু চাইনি, কিন্তু আজ তোমাদের কাছে একটি অনুরোধ করছি। দয়া করে দ্বিতীয় তলায় ঘর তৈরি করে দাও, যাতে আমার পরিবার আরামে থাকতে পারে।”
তরুণের আত্মহত্যার পর তাঁর কাজের চাপের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তরুণের ভাইপো গৌরব সাক্সেনা জানান, সকালে ৬টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর সিনিয়র ম্যানেজাররা তাঁকে পদ থেকে সরানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, “তরুণ তাঁর সুইসাইড নোটে স্পষ্টভাবে সিনিয়রদের নাম উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য তাঁদের দায়ী করেছেন।”
স্থানীয় পুলিশ অফিসার বিনোদ কুমার গৌতম বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছি, যেখানে উল্লেখ রয়েছে যে কর্মস্থলে সিনিয়রদের চাপের কারণে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন তরুণ। পরিবার যদি অভিযোগ জানায়, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
তরুণ সাক্সেনার আত্মহত্যা এবং তাঁর সুইসাইড নোটে কর্মস্থলের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি দেশে কর্মসংস্থানের চাপ ও বিষাক্ত কর্মস্থল সংস্কৃতি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এর আগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যখন ২৬ বছর বয়সী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অ্যানা সেবাস্টিয়ান পেরাইল আত্মহত্যা করেন। তাঁর মা অনিতা অগাস্টিন একটি খোলা চিঠিতে কর্মক্ষেত্রের ওভারটাইম এবং কাজের চাপের কথা উল্লেখ করেছিলেন। অ্যানার মৃত্যুর পর ইওয়াই ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান রাজীব মেমানি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের কল্যাণের বিষয়টি আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
অ্যানার ঘটনার পর দেশের শ্রম মন্ত্রকও একটি তদন্ত শুরু করেছে। তরুণ সাক্সেনার এই মর্মান্তিক মৃত্যু ও তার সুইসাইড নোটে অভিযোগগুলিও একই বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতির ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।